পৃথিবীর রহস্যময় ও ভয়ংকর ৫ টি নদী

সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে নদীর অবদান অনস্বীকার্য, প্রায় বিশ্বের সমস্ত বড় বড় সভ্যতা গুলি গড়ে উঠেছিল নদ-নদীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু আমাদের পৃথিবীতে এমন কিছু ভয়ঙ্কর নদী আছে যেখানে নামার কথা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সেই নদী বা জলাশয় গুলি আসলেই এক একটি মৃত্যুর ফাঁদ। আজকের এই এপিসোডে আমরা আলোচনা করবো এই রকমই ৫টি ভয়ঙ্কর নদী ও লেকের ব্যাপারে, যা হয়ত আপনি আগে শোনেননি।
রিও টিনটো নদী : স্পেনে অবস্থিত এই নদী ওয়েলভা প্রদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে আন্দালুসিয়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। রক্তবর্ন এই নদীর জল যতটা না আপনাকে অবাক করবে তার থেকে বেশি চমকে উঠবেন, যখন জানবেন এই নদীর জল কতটা ভয়ঙ্কর। এই নদীর জলে উচ্চমাত্রার অ্যাসিড থাকার ফলে কোনও প্রাণীই এখানে বেঁচে থাকতে পারেনা। আশেপাশে তামা, রুপা ও সোনার খনি থেকে নির্গত বিভিন্ন ধাতুর বর্জ এই নদীর জলে মিশে এই নদীকে করে তুলেছে রক্তবর্ন লাল এবং বিষাক্ত।

লেক ইজান : ইন্দোনেশিয়েয়ার জাভা প্রদেশে অবস্থিত মাউন্ট মেরাপি আগ্নেয়গিরি। এর এক পাশে রয়েছে ইজান নামের এক মৃত আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্টি এক ধরনের সিঙ্কহোল হচ্ছে এই লেক ইজান। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং বিষাক্ত লেক এটি। কোনও প্রাণী বাঁচতে পারেনা এই লেকের জলে, এর জল এতটাই বিষাক্ত যে, লেকের পাড়ে জন্মাতে পারেনি কোন গাছ। এই লেকের জলে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ঘনীভূত সালফিউরিক অ্যাসিড, যে কারনে এই লেকের জলে নামার কছুক্ষনের মধ্যে জীবিত কোনও প্রাণীর দেহ গলে যায়। আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন একটি সালফারের খনির করনেই এই লেকের জল এত বিষাক্ত হয়ে পরেছে।
আমাজন নদী : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেনফরেস্ট আমাজন জঙ্গল, এই আমাজন নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাজন জঙ্গল। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী ও অরন্য আজও নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে অনেক রহস্য। এই নদী যে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জল ধারন করে তাই নয়,এই নদীতে বাসকরে পৃথিবীর বিভিন্ন ভয়ঙ্কর ও বিষাক্ত প্রাণী। এদের অনেকে এতটাই বিষাক্ত যে তাদের একটি মাত্র দংশনে আপনি কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারাতে পারেন আপনার প্রান। এই নদীতে বাস করে ভয়ঙ্কর কুমীর, প্রকাণ্ড অ্যানাকোন্ডা, মাংসাশী পিরানহা এবং বিষাক্ত এক প্রকারের পরজীবী প্রাণী ক্যান্ডারো আর এদের জন্যই আমাজন নদী হয়ে উঠেছে বিশ্বের ভয়ঙ্কর নদীগুলির মধ্যে একটি।
ইয়াংসি নদী : প্রায় দেড় বিলিয়ন মানুষ বাস করে চীনে। বর্তমানে যে সমস্যাটি চীনে প্রকট ভাবে দেখা দিয়েছে তা হল পরিবেশ দূষণ। আর এই পরিবেশ দূষণের ভয়ঙ্কর প্রভাব পরেছে, চীনে অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম নদী ইয়াংসির উপরে। এই নদীর ধারে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৭ হাজার বসতি, আর বেশীর ভাগ বসতিতেই আধুনিক পয়নিষ্কাশনের কোনও সুবিধা নেই। মানুষের বর্জ এবং বিভিন্ন কলকারখানার দূষিত পদার্থ নদীর জলে মিশে জলের স্বাভাবিক রঙটাই বদলে গেছে। এই নদীর জল যে কতটা দূষিত তা বোঝা যায় সরকারি এক প্রতিবেদন থেকে, যেখানে বলা হয়েছে এই নদীর ধারে বসবাসরত মানুষজন রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের উচ্চ সীমায়।
ফুটন্ত লেক : ডমিনিকান রিপাবলিকের মর্নেটোয়া পিটার্নস ন্যাসানাল পার্কে রয়েছে এই অদ্ভুত লেক। ১৮৭০ সালে এই লেকটি আবিষ্কার করা হয়। এই লেকে রয়েছে প্রচণ্ড ফুটন্ত জল, লেকের ধারের জলের তাপমাত্রা প্রায় ৯২ ডিগ্রী সেলসিয়েয়াস। কিন্তু লেকের মঝখানে, জলের তাপমাত্রা এখনও রেকর্ড করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অতিরিক্ত উষ্ণতার জন্য এই জলে কোনও প্রাণীই বাঁচতে পারেনা।
এই রকমই অজানা ও রোমাঞ্চকর ঘটনা জানতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন।

No comments