আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন
অনেকদিন আগের কথা। একবার এক খোদাভীরু আলেম দূরের সফরে বের হলেন। তিনি সাথে একটি মোরগ নিলেন যাতে ফজরের নামাজের জন্য তাকে ডেকে দেয়। পোষা কুকুরটাকেও সাথে নিলেন যাতে চোর থেকে তাকে পাহারা দেয়। একটা গাধা নিলেন তার উপর বইপত্র এবং খাদ্য সামগ্রী বহন করার জন্য।
সারাদিন চলতে চলতে সূর্যাস্তের সময় তিনি একটি গ্রামে পৌছলেন। তিনি সেই তাঁর রাতটা ঐ গ্রামে কাটাতে চাইলেন কিন্তু কেউ তাকে মেহমান হিসেবে গ্রহন করল না। অগত্যা তিনি গ্রামের বাইরে জঙ্গলের পাশে এক গাছের নীচে রাত কাটাতে বাধ্য হলেন।
রাতের শুরুতে একটা এক নেকড়ে এসে কুকুরের সাথে লড়াই বেঁধে গেল, অবশেষে কুকুরটি মারা গেল। আলেম লোকটি সাহস হারালেন না, বললেন “আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।” হয়ত এই ক্ষতির মধ্যেই আমার কল্যাণ নিহিত আছে। রাত আরেকটু গভীর হলে জঙ্গল থেকে একটা শিয়াল এসে মোরগটি নিয়ে গেল। তখনও লোকটি বললেন “আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।” অতঃপর আরেকদল নেকড়ে এসে গাধাটির ঘাড় মটকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল, তখনও আলেমটি বললেন “আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”
ইশার নামায শেষ করে আলেম লোকটি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ফজরের সময় চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন শেষ রাতে ঐ গ্রামে ডাকাতরা আক্রমণ করে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে এবং অনেক প্রাপ্তবয়স্ক লোককে হত্যা ও জখম করেছে। আলেম লোকটি আল্লাহ তাআ’লার কুদরত বুঝতে পারলেন । তিনি ভাবলেন ঐ গ্রামের কেউ যদি তাকে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করত তাহলে গ্রামবাসীর যে অবস্থা হয়েছে তাঁরও হয়তো ঠিক একই অবস্থা হতো। আবার যদি তার মোরগ, কুকুর, গাধা জীবিত থাকত তাহলে নিশ্চয়ই ডাকাডাকি করত ডাকাতরা সেটা শুনতে পেত এবং গ্রামের বাইরে এসে তারও সবকিছু লুটপাট করতো হয়ত হত্যা বা জখমও করতো।
সেই আলেম লোকটি আবারও আল্লাহ তাআ’লার শুকরিয়া আদায় করলেন এবং বললেন: আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আল্লাহ তায়ালা যা’ই করেন তাতে তার বান্দাদের কোনো না কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে যা শুরুতে বোঝা যায় না। আমরা শুরুটা দেখেই হতাশ হয়ে পড়ি, ধৈর্য্য এবং বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, যা কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। আর আল্লাহ তায়ালা কাউকে অযথা কষ্ট দেন না। কারও উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাকওয়া অর্জনের ও বিপদে ধৈর্যধারণের তৌফিক দান করুন। আমিন।।
Post a Comment