বাদশাহ ও মনিবের ভালোবাসার প্রতিদান
বাগদাদের সন্নিকটে এক গ্রামে এক দরিদ্র ব্যক্তি বাস করত। লোকটির একদিন সাধ জাগলো বাদশার দরবারে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করবে। বাদশাহও তো আর যেনতেন নয়, অর্ধ দুনিয়ার শাসক। তখনকার মানুষ বাদশার কাছে গেলে কিছু হাদিয়া নিয়ে যেত।
উদ্দেশ্য বাদশার একটু সুদৃষ্টি যেন তার উপর পড়ে। লোকটি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করল যে, আমি তো বাদশার দরবারে যাচ্ছি। তার জন্য কোন হাদিয়া তোহফা নেওয়া উচিত?
লোকটির বসবাস ছিল ছোট্ট একটা গ্রামে। দুনিয়ার কোন খবর তার তেমন ছিলো না। তার স্ত্রী তাকে পরামর্শ দিল, আমাদের ঘরে কলসে যে পানি আছে সেটা নিয়ে যাও। রাজ দরবারের লোকজন এমন স্বচ্ছ শীতল ও বিশুদ্ধ পানি পাবে কোথায়? লোকটিও তার স্ত্রীর কথা যৌক্তিক মনে করল। পানি নিয়ে রাজ দরবারে রওয়ানা দিল। তখন তো আর গাড়ি বা উড়োজাহাজের যুগ ছিলোনা। লোকটি পায়ে হেঁটেই কলসি মাথায় নিয়ে রওয়ানা হল।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে কলসের উপর ধুলাবালি এমনকি ভিতরেও পানি ময়লা আর গন্ধ হয়ে গেল। বেচারা গ্রামের লোক এসব খেয়াল না করেই রাজ দরবারে উপস্থিত হয়ে খলিফার সামনে কলসি পেশ করলো।
খলিফা জানতে চাইলেন এতে কী? লোকটি বলল, হুজুরের জন্য আমার দীঘির বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি এনেছি। ভাবলাম আপনার দরবারে এমন পানি কোথায় পাবেন! দয়া করে এটা কবুল করে আমাকে ধন্য করুন।
খলিফা একজনকে বললেন, ঢাকনা সরাও তো দেখি! ঢাকনা সরানো হল, পানি গন্ধ হয়ে গেছে, ময়লাও হয়েছে। খলিফা ভাবলেন! বেচারা নিখাঁদ ভালবাসার কারণেই তার যা সামর্থ্য এমন জিনিস নিয়ে এসেছে। তার মন ভাঙা ঠিক হবে না। তাই খলিফা লোকটির কলস ভরে মূল্যবান আশরাফি দিতে নির্দেশ দিলেন। লোকটিও খুব খুশি হল!
লোকটি যখন রাজ দরবার থেকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি চাইলো তখন খলিফা এক নওকরকে বললেন তাকে কিছু দূর এগিয়ে দিয়ে এসো আর তাকে দজলা নদীর তীর দিয়ে নিয়ে যাবে। কিছু দূর আসার পর দজলার অথৈ পানি দেখে গ্রাম্য লোকটি বলল ওখানে কী? নওকর বলল, ওটা দজলা নদী। কাছে গিয়ে সুন্দর করে দেখবে চলো। নদীর কাছে গিয়ে গ্রাম্য লোকটি নদীর স্বচ্ছ সুন্দর পানি দেখলো এবং কিছুটা পানও করল। আর ভাবতে লাগলো, হায়! খলিফার দরবারের কাছে এত সুন্দর পানি আর আমি তার জন্য ময়লা পানি এনেছিলাম। আচ্ছা! তাহলে খলিফা আমার পানি গ্রহণ করলেন কেন?
দয়া আর উদারতার খাতিরে!
আমার পানির তো তার কোন প্রয়োজনই ছিলোনা। উপরন্তু আমাকে কলস ভরে মূল্যবান উপহারও দিয়ে দিলেন!
*শিক্ষা:*
আমাদের ইবাদতও তেমনি আল্লাহর কোনো উপকারে লাগেনা। তিনি আমাদের ইবাদতের অভাবী নন। আর আমাদের ইবাদতও তেমন স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল নয়, বরং নানাভাবে ত্রুটিযুক্ত। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালবাসা ও আন্তরিকতা থাকে বলেই হয়ত আল্লাহ আমাদের ত্রুটিমুক্ত ইবাদত ও প্রচেষ্টাকে কবুল করে নেন, আবার আপন দয়ায় বহুগুণ বাড়িয়ে সেগুলোর প্রতিদানও দেন। অথচ আমাদের ইবাদতকে চাইলেই তিনি ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন।
আল্লাহ আমাদেরকে তার হুকুম, কুরআনুল কারীম ও নবীজী সা. এর দেখানো পদ্ধতিতে ইখলাসের সাথে তামিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন ।।
– আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী (রহ.)’র গ্রন্থ থেকে
Post a Comment