কুপি বাতি ও যুবকের সৎকর্মের প্রতিদান


ভারতবর্ষের এক দরিদ্র ছেলে রাতের বেলা কোরআন পড়ছিল। হঠাৎ কুপির তেল শেষ হয়ে বাতিটা নিভে যাওয়ায় ছেলেটি মনের দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, ‘হে আল্লাহ, আমায় এত গরীব করে কেনো দুনিয়াতে পাঠালে? তেল কিনে কোরআন পাঠ করার সামর্থ্যও যে আমার নাই’।

তখন ঐ ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেটির কান্না শুনে এক যুবক তার দরজায় কড়া নাড়ল। ছেলেটি দরজা খোলার পর তাকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘তুমি কাঁদছো কেনো?’

ছেলেটি তাকে বললো, আমি একজন ছাত্র আমি এতই গরীব যে তেল কিনে কোরআন তেলাওয়াতও করতে পারি না’।

যুবকটির মন গলে গেল, সে বললো, ‘তুমি কেঁদো না আমি তোমার জন্য কেরোসিন নিয়ে আসছি’। কিছুক্ষন পরে যুবকটি কেরোসিন কিনে গরীব ছেলেটির হাতে দিয়ে বললো, মানুষ কতটা অভাবী হতে পারে আমি এতদিন ভাবিনি, অথচ জীবনে অনেক টাকা নষ্ট করেছি‘আমি এখন থেকে আর কোনোদিন মদ খাব না। এতদিন যত টাকার মদ খেতাম এখন থেকে সেই টাকা দিয়ে তোমাকে কোরআন পড়ার জন্য কেরোসিন কিনে দেব ইনশাআল্লাহ’।

দুর্ভাগ্যক্রমে ওই রাতেই যুবকটি মারা গেলেন কিন্তু সে মদ খেতো বলে এলাকার লোকজন কেউ তার জানাযা এবং কাফন-দাফন করতে চাইলো না । এমনকি তার লাশ এলাকার কবরস্হানে দাফন করতেও দিবেনা বলে জানালো। শেষে যুবকটির লাশ জঙ্গলে ফেলে রেখে আসা হল। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মহিমায় তিন দিন অতিবাহিত হবার পরেও লাশটি সম্পূর্ন অক্ষত অবস্হায় ছিল। বনের কোনো হিংস্র জন্তু জানোয়ার ছিড়ে খাওয়া তো দূরের কথা একটা পোকা মাকড়ও তার মৃতদেহে লাগে নি।

এমনিভাবে চারদিন কেটে গেলে ঐ এলাকার তিনজন পরহেজগার লোক একইভাবে স্বপ্নে দেখলেন যুবকটির লাশ দাফন করতে হবে। পরের দিন তারা তিনজন মিলে লাশটিকে জঙ্গল থেকে তুলে এনে গোসল করিয়ে কাফন পড়িয়ে জানাযার আয়োজন করলেন, কিন্তু মদখোর বলে তার জানাযায় অল্প কিছু এসেছিল। জানাযার আগে ইমাম সাহেব জানতে চাইলেন এমন কেউ কি নাই যে এই মৃত ব্যক্তির অন্তত একটি ভাল কাজের কথা বলতে পারবে?

তখন একজন লোক হাত তুললো, সে ছিল পাশের বাজারের দোকানদার, যার কাছ থেকে মৃত যুবকটি একদিন ঐ গ্রামের গরীব ছেলেটির জন্য কেরোসিন তেল কিনেছিল। দোকানদার লোকটি বললো, ‘আমার কাছে তেল কেনার সময় সে আফসোস করে বলেছিল জীবনে অনেক পাপ করেছি, দেখি এই ছোট্ট ভালো কাজের বিনিময়ে যদি আল্লাহ আমাকে মাফ করেন !’

ইমাম সাহেব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন, অতঃপত তার জানাযা পড়িয়ে সম্মানের সাথে দাফন করা হয়।

শিক্ষা:

ভালো কাজ নষ্ট হয় না, প্রতিদান হয়ে ফিরে আসে। কুরআনে আছে “নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল নষ্ট করেন না।”

*– সূরা তাওবা: ১২০*

No comments