বাদশাহ হারুনুর রশীদ এবং বাহলূল আব্বাসীর ঘটনা
বাদশাহ হারুনুর রশীদ এবং বাহলূল আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদ এর শাসন আমলে বাহলুল নামে এক পাগল ছিল। যে অধিকাংশ সময় কবরস্থানে কাটাতো। কবরস্থানে থাকা অবস্থায় একদিন বাদশাহ হারুনুর রশীদ তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
বাদশাহ তাকে ডাক দিলেনঃ বাহলুল ! ওহে পাগল ! তোমার কি আর জ্ঞান ফিরবে না ?
বাহলুল বাদশাহর এ কথা শুনে নাচতে নাচতে গাছে উপরে মগডালে চড়লেন এবং সেখান থেকে ডাক দিল- হারুন ! ওই পাগল ! তোর কি কোনদিন জ্ঞান ফিরবেনা ? বাদশাহ গাছের নিচে এসে বাহলুলকে বললেন, আমি পাগল নাকি তুমি, যে সারা দিন কবরস্থানে বসে থাকে?
বাহলুল বলল, আমিই বুদ্ধিমান। বাদশাহঃ কীভাবে?
বাহলুল রাজপ্রাসাদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেনঃ আমি জানি এই রঙ্গীলা দালান ক্ষণিকের আবাসস্থল, এবং এটি (কবরস্থান) স্থায়ীনিবাস; এজন্য আমি মরার পূর্বেই এখানে বসবাস শুরু করেছি। অথচ তুই গ্রহণ করেছিস ঐ রঙ্গীন শালাকে আর এই স্থায়ী নিবাসকে (কবর) এড়িয়ে চলছিস। রাজপ্রসাদ থেকে এখানে আসাকে অপছন্দ করছিস যদিও তুই জানিস এটাই তোর শেষ গন্তব্য। এবার বল, আমাদের মধ্যে কে পাগল ? বাহলুলের মুখে এ কথা শোনার পর বাদশাহর অন্তর কেঁপে উঠল, তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁর দাড়ি ভিজে গেল। তিনি বললেন: খোদার কসম ! তুমিই সত্যবাদী। আমাকে আরও কিছু উপদেশ দাও!
বাহলুল: তোমার উপদেশের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। তাকে যথার্থ ভাবে আকড়ে ধর।
বাদশাহ: তোমার কোন কিছুর অভাব থাকলে আমাকে বল,আমি তা পূরণ করব।
বাহলুল: হ্যা, আমার তিনটি অভাব আছে, এগুলো যদি তুমি পূরণ করতে পার তবে সারা জীবন তোমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করব।
বাদশাহ: তুমি নিসংকোচে চাইতে পার।
বাহলুল: মরণের সময় হলে আমার আয়ূ বৃদ্ধি করতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বাহলুল: আমাকে মৃত্যুর ফেরেশতা থেকে রক্ষা করতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: আমাকে জান্নাতে স্থান করে দিতে হবে এবং জাহান্নাম থেকে আমাকে দূরে রাখতে হবে।
বাদশাহ: আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বাহলুল: তবে জেনে রাখ, তুমি বাদশাহ নও বরং তুমি অন্যকারও অধীনস্থ।
অতএব তোমার কাছে আমার কোন চাওয়া বা প্রার্থনা নেই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এই দুনিয়ার রং-তামাশা ছেড়ে কবরের প্রস্তুতি গ্রহনকরার তাউফীক দানকরুন। আমীন
Post a Comment