শিক্ষণীয় গল্প: ভালো কাজের প্রতিদান
ছোট্ট নীল জেলে প্রতিদিনই তার বাবাকে মাছ ধরতে সাহায্য করতে সাগরে আসত। সে খুব উদার ছিল। বাবার অলক্ষে অনেক বাচ্চা মাছকেই সে পানিতে ছেড়ে দিত। বাবার জালে আটকে থাকা মাছগুলোকে দেখে তার অনেক কষ্ট হত। কেমন ছট্ ফট্ করত ওগুলো।
একদিন হল কি, নীল জেলের বাবার জালে একটা কচ্ছপ আটকা পরল। কচ্ছপরা সব সময় ভান ধরে থাকতে পছন্দ করে। জালে আটকে যাওয়া কচ্ছপটিও মরার মত চুপটি মেরে রইল। নীল জেলের বাবা সেতিকে মরা মনে করে নৌকাতেই ফেলে রাখল। এদিকে কচ্ছপ ছানার যায় যায় অবস্থা। পানি ছাড়া আর কতক্ষণ বেঁচে থাকা যায়। সেদিন নীল আকাশের প্রখর সূর্যটা একটুকুও বিশ্রাম নিচ্ছিলনা।
প্রচণ্ড রোদে কচ্ছপ ছানার শরির শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবার যোগার। কচ্ছপ ছানা দূর্বল হয়ে গেলেও বুদ্ধি লপ পায়নি। সে অনেকক্ষন ধরেই খেয়াল করছিল নীলের কান্ড কারখানা। সে বাবার জাল থেকে চুপ করে মাছ ছেড়ে দিচ্ছে। তাই সে মনে মনে চিন্তা করছিল, কখন সে নীলের চোখে পরবে।
বাবার সাথে মাছ সংগ্রহ করতে করতে নীল জেলে হাপিয়ে উঠেছিল। একটু বিশ্রাম নিবে বলে বসল। কিন্তু ভুল করে কচ্ছপ ছানাটির উপড়েই বসে পড়ল। ছোট্ট কচ্ছপ অনেক কষ্টে নড়ে উঠল। নীল ভয় পেয়ে গেল, তার নিচ থেকে কে নড়ছে? উঠে বসতেই দেখল, সে একটি ছোট্ট কচ্ছপের উপর বসে ছিল। কচ্ছপটির জন্য তার খুব মায়া হল। সে কচ্ছপটিকে আদরের সাথে হাতে নিল। মনে করেছিল কচ্ছপটি মারা গেছে। কিন্তু কচ্ছপটি তার খোলসের ভিতর থেকে মাথা বের করল, তা দেখে নীলের আনন্দ কে দেখে! সে নাচতে লাগল।
নীল হঠাৎ নাচা নাচি বন্ধ করে দিল। কারন কেউ তাকে ডাকছিল কিন্তু কে সে তা বুঝতে পারছিলনা। একসময় বুঝতে পারল তার হাতে থাকা কচ্ছপটি তাকে ডাকছে। কচ্ছপটি মাথা বের করে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “ও ভাই ছোট্ট জেলে, আমাকে পানিতে ছেড়ে দেওনা, আমি কচ্ছপদের কাছে ফিরে যাই”। নীলের খুব মায়া হল, সে তাকে পানিতে ছেড়ে দিল।
সন্ধ্যা বেলায় নীল সাগরের মাঝে প্রচণ্ড ঢেউ খেলতে লাগল। ঝড় উঠেছে কিন্তু নীলদের নৌকা তখনও পাড়ে আসতে পারেনি। একসময় নীলদের ছোট্ট নৌকাটা ঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ভেসে থাকতে পারলনা। সেটি ডুবে গেল। বাবা নীলের হাত ধরে ছিল, ঢেউয়ের প্রকোপে হাত ছুটে গেল। নীল পানিতে তলিয়ে যেতে লাগল। সে দেখল পানির তলায় পানিগুলো কেমন ভেংচি কাটছে। তার দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।
ঠিক তখনই কিছু একটা তাকে পানির উপরে তুলে ধরল। নীল চেয়ে দেখল তাকে দুটি কচ্ছপ ভাসিয়ে ডাঙ্গায় নিয়ে যাচ্ছে। আর পাশ থেকে কানের কাছে চুপিচুপি কেউ বলে যাচ্ছে, “বন্ধু তোমায় প্রতিদান দিয়ে গেলাম”।
Post a Comment