অভাব কাকে বলে?
ক্লাসে একজন স্যার ঢুকেই, সামনের বেঞ্চে বসা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “অভাব কাকে বলে..?”
ছেলেটি উত্তর দিলোঃ- ‘অর্থনীতিতে বস্তুগত বা অবস্তুগত কোনো দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্খাকে অভাব বলে।’
(এটা তো বইয়ের ভাষা, সাধারণত অভাব কাকে বলে?
ছেলেটি মাথা নিচু করে বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে রইলো,, কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না।।
স্যার আবার তাড়া দিলেন বলো, ‘অভাব কাকে বলে?’)
তখন ছেলেটি বলা শুরু করলো…….
১. আমি কলেজে আসার সময় মা আমাকে রিকশা ভাড়াটা দেবার জন্য, সারা ঘর তন্য তন্য করে খুজে ২০/৩০ টা টাকা বাহির করে দেন। আমি ৫/৭ মিনিট পর বাসায় ফিরে, ভাড়ার টাকাটা মায়ের হাতে দিয়ে বলি, মা_ আজ কলেজে ক্লাস হবে না।
মা বলেন আগে খরব নিবি না ক্লাস হবে কি হবে না?
মায়ের সাথে এই লুকোচুরি খেলাটা হচ্ছে আমার কাছে, ‘অভাব’।
২. বাবা যখন রাত করে বাসায় ফেরেন, মা তখন বাবাকে জিজ্ঞেস করে এত রাত হলো কেন ফিরতে?
বাবা তখন মুচকি হেসে বলে, ‘ওভার টাইম ছিলো যে’ ওভার টাইম না করলে সংসার চালাবো ক্যামনে? এতটুকু রোজগারে কি সংসার চলে?
বাবার এই অতিরিক্ত পরিশ্রম’ই হচ্ছে আমার কাছে “অভাব!”
৩. ছোট বোন মাস শেষে প্রাইভেট টিচার এর টাকা দেওয়ার জন্য বাবার কাছে টাকা চাইতে সংকোচ বোধ করে, আমার কাছে সেই সংকোচ টা’ই হচ্ছে “অভাব!”
৪. মাকে যখন দেখি ছেঁড়া কাপড়ে সেলাই দিতে দিতে বলে, কাপড় টা অনেক ভালো আরও কিছুদিন পরা যাবে! মায়ের এই মিথ্যে শান্তনাটা’ই হচ্ছে আমার কাছে “অভাব!”
৫.মাস শেষে টিউশনির পুরো খরচ টা মায়ের হাতে দিয়ে বলি, মা” তুমি এটা দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়ে নিও…৷
মা তখন স্বস্তির হাসি হাসেন।
মায়ের এই স্বস্তির হাসিটাই হচ্ছে আমার কাছে “অভাব!”
৬. বন্ধুদের দামি স্মাটফোনের ভিড়ে নিজের নরমাল হ্যান্ডসেট টাকে যখন লজ্জায় লুকিয়ে রাখি,,
এই লজ্জাটা’ই হচ্ছে আমার কাছে “অভাব”
৭. অভাবি হওয়ার কারণে, কাছের মানুষগুলো আমার থেকে দুরে সরে যায়।
আমার থেকে দুরে সরে পড়াটাই হচ্ছে আমার কাছে “অভাব!”
পুরো ক্লাসে নিরাবতা পড়ে গেলো, ক্লাসের সবাই দাড়িয়ে পড়লো,, অনেকের’ই চোখে পানি!
স্যার চোখের পানি মুছতে মুছতে ছেলেটা কে কাছে টেনে নিলেন…..
বস্তুতঃ আমাদের সহপাঠীদের মাঝে এমন অনেকেই আছে আছে,, যারা কয়েক মাস অপেক্ষা করার পরও বাড়ী থেকে সামান্য টাকা পায় না। সব দুঃখ-কষ্টকে আড়াল করে হাসি মুখে দিনের পর দিন পার করে দেয় খেয়ে না খেয়ে।
তাদের হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলোকে বোঝ।
Post a Comment