কাজী নজরুল ইসলামের ৫০টি উক্তি ও বাণী
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম চুরুলিয়া, আসানসোল, পশ্চিমবঙ্গের একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে ২৪ মে ১৮৯৯ (বাংলা – ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬) সালে জন্মগ্রহন করেন। বিংশ শতাব্দীর অগ্রণী কবিদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ এবং দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে প্রগতিশীল নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টি করেছিলেন।
দুই বাংলাতেই তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন, যা আজো অব্যাহত এবং যুগান্তকারী হিসেবে তাঁর কবিতাগুলো মানুষকে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার, অবিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। তাঁর কলম ব্রিটিশ অত্যাচার বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহী রুপ নিয়েছিল তা আজো কালের সাক্ষী হয়ে মানুষের হৃদয়ে সকল অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুর তুলে। তিনি তাঁর কবিতা এবং বিভিন্ন যুগান্তকারী বাণীর মাধ্যমে মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে স্থান করে নিয়েছেন।
ধর্ম, সমাজ, মানুষ, প্রেম, ভালবাসা, নারী, বিদ্রোহ, সহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং উপমহাদেশিক বিষয় নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি এবং বাণীগুলো নিয়েই এই আয়োজন।
(১) তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ? চাঁদের হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী, বলে না তো কিছু চাঁদ॥
(২) সে দেশে যবে বাদল ঝরে কাঁদে না কি প্রাণ একেলা ঘরে, বিরহ ব্যথা নাহি কি সেথা বাজে না বাঁশি নদীর তীরে।।
(৩) চাঁদ হেরিছে চাঁদমুখ তার সরসীর আরশিতে ছোটে তরঙ্গ বাসনা ভঙ্গ সে অঙ্গ পরশিতে।
(৪) কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।
(৫) খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে। প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।
(৬) স্বপনে কি যে কয়েছি তাই গিয়াছে চলে জাগিয়া কেদে ডাকি দেবতায় প্রিয়তম প্রিয়তম প্রিয়তম।।
(৭) বসন্ত এলো এলো এলোরে পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে মুহু মুহু কুহু কুহু তানে মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে
(৮) বসন্ত মুখর আজিদক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনেবনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি।
(৯) নুড়ি হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থেকেও রস পায় না।
(১০) মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।
(১১) আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন।
(১২) বসন্ত এলো এলো এলো রে পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে মুহু মুহু কুহু কুহু তানে।
(১৩) বল বীর-বল উন্নত মম শির! শির নেহারী’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর।
(১৪) গগনে কৃষ্ণ মেঘ দোলে – কিশোর কৃষ্ণ দোলে বৃন্দাবনে থির সৌদামিনী রাধিকা দোলে নবীন ঘনশ্যাম সনে; দোলে রাধা শ্যাম ঝুলন-দোলায় দোলে আজি শাওনে ।
(১৫) মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনও মন্দির-কাবা নাই।
(১৬) কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
(১৭) শিহরি উঠো না শাস্ত্রবিদেরের ক’রোনা ক’ বীর ভয় তাহারা খোদার খোদ ‘প্রাইভেট সেক্রেটারি’ তো নয় ।
(১৮) শুণ্যে মহা আকাশে তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে ভাঙ্গিছো গড়িছো নীতি ক্ষণে ক্ষণে নির্জনে প্রভু নির্জনে খেলিছো ।
(১৯) অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে প্রদীপ-শিখা সম কাঁপিছে প্রাণ মম তোমারে সুন্দর, বন্দিতে সঙ্গীতে।।
(২০) গিন্নির চেয়ে শালী ভালো।
(২১) তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।
(২২) বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে- বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি, ফিকাহ ও হাদিস চষে।
(২৩) আসিবে তুমি জানি প্রিয় আনন্দে বনে বসন্ত এলো ভুবন হল সরসা, প্রিয়-দরশা, মনোহর। বনানতে পবন অশান্ত হল তাই কোকিল কুহরে, ঝরে গিরি নির্ঝরিণী ঝর ঝর।
(২৪) আমার যাবার সময় হল দাও বিদায় মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।।
(২৫) যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে, অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে! ছবি আমার বুকে বেঁধে পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মর” কানন গিরি, সাগর আকাশ বাতাস চিরি’ যেদিন আমায় খুঁজবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
(২৬) ফুটবে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী, আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদনী- চৈতী-রাতের চাঁদনী। ঋতুর পরে ফিরবে ঋতু, সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু! চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়, আমার মতন চোখ ভ’রে চায় যে-তারা তা’য় খুঁজবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
(২৭) ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে আমায় তারা ডাকে সাথী আয়রে আয় সজল করুণ নয়ন তোলো দাও বিদায়।।
(২৮) মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত। যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।
(২৯) হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।
(৩০) যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৩১) গাইতে গিয়ে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?- আসবে ভেঙ্গে কান্না, পড়বে মন আমার সোহাগ কন্ঠে তোমার কাদবে বেহাগ পড়বে মনে আমার ফাকি অশ্রুহারা কঠিন আখি ঘন ঘন মুছবে, বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৩২) কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে সম্পুর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।
(৩৩) আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হানত্ সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান– আসবে তখন পান’। হয়ত তখন আমার কোলে সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে, আপনি সেদিন সেধে কেঁদে চাপবে বুকে বাহু বেঁধে, চরণ চুমে পূজবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
(৩৪) ছবি আমার বুকে বেধে পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে ফিরবে মরু কানন গিরি সাগর আকাশ বাতাশ চিরি সেদিন আমায় খুজবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৩৫) আবার গাঙ্গে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে সেই তরীতে হয়তো কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে দুলবে তরী রঙ্গে, পড়বে মনে সে কোন রাতে এক তরীতে ছিলে সাথে এমনি গাঙে ছিল জোয়ার নদীর দুধার এমনি আধার তেমনি তরী ছুটবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৩৬) তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা বন্ধ আমার মত কেদে কেদে হয়তো হবে অন্ধ সখার কারা বন্ধ, বন্ধু তোমার হানবে হেলা ভাঙ্গবে তোমার সুখের খেলা দীর্ঘ লো কাটবে না আর বইতে প্রাণ শ্রান্ত এ ভার সরন মনে যুঝবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৩৭) গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আসবে যখন কান্না, ব’লবে সবাই-“ সেই যে পথিক তার শেখানো গান না?’’ আসবে ভেঙে কান্না! প’ড়বে মনে আমার সোহাগ, কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ! প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি ঘন ঘন মুছবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
(৩৮) আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি, থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী! আসবে শিশির-রাত্রি! থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন, থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন, বঁধুর বুকের পরশনে আমার পরশ আনবে মনে- বিষিয়ে ও-বুক উঠবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
(৩৯) আসবে ঝড়ি, নাচবে তুফান টুটবে সকল বন্ধন কাপবে কুটির সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকেক্রন্দন টুটবে যবে বন্ধন, পড়বে মনে নেই সে সাথে বাধতে বুকে দুঃখ রাতে- আপনি গালে যাচবে চুমা চাইবে আদর মাগবে ছোওয়া আপনি যেচে চুমবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৪০) আবার যেদিন শিউলী ফুলে ভরবে তোমার অঙ্গন তুলতে সে ফুল গাথতে মালা, কাপবে তোমারকঙ্কণ কাদবে কুটির অঙ্গন, পড়বে মনে উঠবে কাদি বুকের জ্বালা করবে মালা চোখের জলে সেদিন বালা মুখের হাসি ঘুচবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৪১) আসবে আবার আশিন হাওয়া, শিশির ছেচা রাত্রি থাকবে সবাই- থাকবে না এই মরন পথের যাত্রীই আসবে শিশির রাত্রি, থাকবে পাশে বন্ধু সুজন থাকবে রাত বাহুর বাধন বধুর বুকের পরশনে আমার পরশ আনবে মনে বিষিয়ে ও বুক উঠবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৪২) আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি জবাবদিহির কেন এত ঘটা যদি দেবতাই হও টুপি পড়ে টিকি রেখে সদা বলো যেন তুমি পাপী নও পাপী নও যদি কেন এ ভড়ং ট্রেডমার্কার ধুম পুলিশি পোশাক পরিয়া হয়েছ পাপের আসামী গুম।
(৪৩) নামাজ পড়, রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই, তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।
(৪৪) আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর ।
(৪৫) আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে, সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে- দুলবে তরী রঙ্গে, প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে এক তরীতে ছিলেম সাথে, এমনি গাঙ ছিল জোয়ার, নদীর দু’ধার এমনি আঁধার তেমনি তরী ছুটবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
(৪৬) প্রেম হল ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন ।
(৪৭) আমার বুকের যে কাটা ঘা, তোমায় ব্যাথা হানত সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়তো হয়ে শ্রান্ত আসব তখন পান্থ, হয়তো তখন আমার কোলে সোহাগ লোভে পড়বে ঢোলে আপনি সেদিন সেধে-কেদে চাপবে বুকে বাহুয় বেধে চরন চুমে পূজবে বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৪৮) স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে, কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,- জাগবে হঠাৎ চমকে! ভাববে বুঝি আমিই এসে ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে, ধরতে গিয়ে দেখবে যখন শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন! বেদনাতে চোখ বুঁজবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
(৪৯) আসবে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন, কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন- টুটবে যবে বন্ধন! পড়বে মনে, নেই সে সাথে বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে- আপনি গালে যাচবে চুমা, চাইবে আদর, মাগবে ছোঁওয়া, আপনি যেচে চুমবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে।
(৫০) আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না’ক আর সে- তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে, আসবে না’ক আর সে! প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে, মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়! সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায় কাঁটা হ’য়ে ফুটবে- বুঝবে সেদিন বুঝবে!
Post a Comment