আবেগতারিত না হয়ে বাস্তবতার ভিত্তিতে স্বপ্ন দেখি!
আবেগ হচ্ছে ভাবাবেশ, অনুভূতির এক বিশেষ রূপ বা ধরন। আবেগকে অনুভূতির এক জটিল রূপ বলে আখ্যায়িত করা যায়। আবেগ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এর উদ্ভব ঘটে কোন ভাব বা ধারনার দ্বারা। বস্তু প্রত্যক্ষণ করার পর বস্তুটির একটা ভাব বা ধারনা মনে জাগরিত হয় এবং এই ধারনাটিই আবেগের সঞ্চার করে। যেহেতু মনে একটি ভাব বা ধারনা জাগরিত হওয়ার পর আবেগ সঞ্চার হয়, তাই আমরা বলতে পারি আবেগ হচ্ছে পূর্বের ভাব ধারনা হওয়ার পরবর্তী স্তর অর্থাৎ অতীত ভাব বা ধারনা থেকেই আবেগ সঞ্চারিত হমনের একটি সহজাত প্রবৃত্তি যা কারোর মেজাজ, পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাবে উদ্ভূত হয়।
অন্যভাবে, স্বতঃস্ফূর্ত বা সজ্ঞাত অনুভূতি- যা যুক্তি বা জ্ঞান থেকে আলাদা তাই আবেগ।আর বাস্তবতা হচ্ছে আবেগকে দূরে সরিয়ে সামনে এগিয়ে চলা। বাস্তবতার কাজ হল-মানুষকে তাদের অতীত থেকে দূরে রাখা। তবে অতীত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা নয়। আবেগ মানুষকে অতীতের দিকে নিয়ে যায় আর বাস্তবতা মানুষকে ভবিষ্যতের কথা বলে এবং ভালোর পথ দেখায়। আবেগ যদি হয় ঘন কুয়াশা, বাস্তবতা হচ্ছে সোনালী মিষ্টি রোদ। মানুষ যখন বেশী আবেগ আপ্লুত হয় তখন উদ্বিগ্নের কুয়াশার পুরু চাদরে ঢেকে ফেলে জীবনকে। ভবিষ্যৎ তার কাছে মূল্যহীন বস্তুতে পরিনিত হয়। একটা সময় হয়তো বাস্তবতার তাগিদে বর্তমানে ফিরে আসে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়। তাই বেশী আবেগতারিত না হয়ে বাস্তবতার দিকে মুখ ফিরে থাকি। বাস্তবতা এমনভাবে মানুষকে ভবিষ্যতের দিকে আকর্ষণ করে যে, যদি কেউ এর মূল্য একবার বুঝে তাহলে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না।
একটা সময় আসে অতীতকে সে পুরোপুরি ভুলে যায়। তবে বিষয়টা হলো বাস্তবতাকে মেনে নেয়া। বাস্তবতা অনেক সময়েই মানুষের সাথে নিষ্ঠুর খেলা খেলে। কিন্তু কোন নিষ্ঠুরতার কারনে হালছাড়া যাবে না। তাই বাস্তব জীবনকে বলতে আমরা ঐ বিষয়কে বুঝি-কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে তার সম্পর্কে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারনা থাকে না। তবে আমরা কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারি। যেহেতু কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে তার সম্পর্কে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারনা থাকে না-তাই যাই ঘটুক না কেন, স্বপ্ন দেখতে নাই মানা। স্বপ্ন সাফল্য এর পথ দেখায় আর স্বপ্ন পূরণের নামই সাফল্য। প্রত্যেকটি মানুষই জীবনে সফল হতে চায় এবং নিজের মতো করে স্বপ্ন দেখে আর সেটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। তবে স্বপ্নটা নিজের যোগ্যতা ও পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় রাখতে হবে।স্বপ্ন দেখা সুস্থভাবে বাঁচার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।
একমাত্র স্বপ্নই ভবিষ্যতের ছবি দেখিয়ে শক্তি ও সাহস যোগায়। বড় কিছু অর্জনের জন্য অবশ্যই স্বপ্ন দেখতে হয়। পৃথিবীর এমন কোন মহান ব্যক্তি নেই, যিনি স্বপ্ন না দেখেই সফল হয়েছেন। তবে স্বপ্ন কোনভাবেই আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারবে না যদি না আমরা বিশ্বাস করি।স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি দরকার নিজের প্রতি বিশ্বাস। আমাদের আত্মবিশ্বাস স্বপ্নকে পুশ করে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। “ আমাকে দিয়ে হবে না, আমি পারব না, আমার পক্ষে সম্ভব না” এমন সংশয় নিজেরদেরকে সফলতার লাইন থেকে বিচ্যুতি করে, তাই এমন চিন্তা না করে দরকার নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা। স্বপ্ন পূরণ-হোক তা সময়সাপেক্ষ, তারপরও নিজের স্বপ্নে অটুট থেকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
লেখা: মুত্তাকিন হাসান
Post a Comment