সমস্যা যত তাড়াতাড়ি ভোলা যায় ততই মঙ্গল
একদিন মনোবিজ্ঞানের এক প্রফেসর ক্লাসে এলেন। তার হাতে পানিপূর্ণ কাচের একটি গ্লাস ছিল। তিনি সেটি শিক্ষার্থীদের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন। হাসিমুখে জানতে চাইলেন, ‘আমার হাতে যে পানিভর্তি গ্লাস দেখছ, এর ওজন কত হতে পারে?’
‘৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম কিংবা ১৫০ গ্রাম হতে পারে, স্যার।’ শিক্ষার্থীরা জবাব দিল।
‘আসলে আমিও জানি না এর ওজন কত। কারণ আমি এটি মেপে দেখিনি।’ প্রফেসর বললেন, ‘ওজন যা-ই হোক, সেটি আমার জানার বিষয় নয়। আমার প্রশ্ন হল- আমি যদি এই গ্লাসটি কয়েক মিনিট এভাবে হাতে ধরে রাখি তাহলে কী হবে?’
শিক্ষার্থীরা বলল, ‘তেমন কিছুই হবে না, স্যার।’
‘ঠিক আছে। কিন্তু আমি যদি গ্লাসটা কয়েক ঘণ্টা এভাবে ধরে রাখি তাহলে কী হবে?’ এবার জানতে চাইলেন প্রফেসর।
এক ছাত্র জবাব দিল, ‘আপনার হাতে ব্যথা শুরু হবে।’
‘ঠিকই বলেছ। এবার যদি আমি এটাকে সারা দিন এভাবে ধরে রাখি তাহলে?’ আবার জানতে চাইলেন প্রফেসর।
আরেকজন বলল, ‘তাহলে আপনার হাত অসাড় হয়ে যেতে পারে। হাতের পেশি কাজ করবে না। আপনি প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হতে পারে।’
একথা শুনে শিক্ষার্থীরা বেশ মজা পেল। হাসলও কেউ কেউ।
প্রফেসরও হাসিমুখে বললেন, ‘তোমরা ঠিকই বলেছ। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কি গ্লাসের ওজন কিংবা উপাদানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে?’
‘না, স্যার। কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ উত্তরে বলল সবাই।
‘তাহলে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন আমার হাতে ব্যথা হবে? কেনই বা হাতের পেশি অসাড় হয়ে যাবে?’ এবার জানতে চাইলেন প্রফেসর। শিক্ষার্থীরা দ্বিধায় পড়ে গেল। একটু থেমে প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, হাতের ব্যথা কমাতে চাইলে আমাকে কী করতে হবে?’
‘গ্লাসটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে দিতে হবে, স্যার।’ একজন শিক্ষার্থী জবাব দিল।
‘ঠিক তাই।’ প্রফেসর বললেন, ‘জীবনের সমস্যাগুলোও এই এক গ্লাস পানির মতো। কিছুক্ষণ ধরে রাখলে সমস্যা হয় না। কিন্তু দীর্ঘ সময় হলে বড় আকারের সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। আমাদের জীবনের সমস্যা কিছুক্ষণ মাথায় থাকলে তেমন কিছু হবে না। কিন্তু যদি সারা দিন শুধু সমস্যা নিয়েই চিন্তা করি তাহলে সেটা কষ্ট দিতে শুরু করবে।
যত বেশি চিন্তা করা হবে কষ্টগুলো বাড়তেই থাকবে। ফলে সব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। জীবন হয়ে যাবে অসাড়। তাই সমস্যার চাপ সারা দিন না বয়ে রাতে শুতে যাওয়ার আগে গ্লাসের মতোই তা নামিয়ে রাখতে হবে।
জীবনের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার চেয়ে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলা।
বন্ধুরা, এই গল্পের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, জীবনের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার চেয়ে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল চিন্তাগুলো ঝেড়ে ফেলা।
Post a Comment