বনি ইসরাইলের বুজুর্গ জুরাইজের শিক্ষামূলক ঘটনা
বনি ইসরাইলের একজন বুজুর্গ ছিলেন। নাম তার জুরাইজ। তিনি সালাতে একনিষ্ঠতার জন্য মাটির তৈরি জীর্ণ ডেরায় ইবাদত করতেন। একবার তার মা তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি তখন ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। মা ডাকলেন। জুরাইজ ভাবলেন, নামাজ পড়ব নাকি মায়ের ডাকে সাড়া দেব? রবের ভয়ে তার মন নামাজেই আটকে গেল। মা ফিরে গেলেন ব্যথাতুর মনে।
পুনরায় আরেকদিন তার মা এলেন। ডেরায় ঢুকে দেখলেন, নামাজ পড়ছে তার ছেলে। মায়ের মন, কত সময় অপেক্ষার প্রহর গুনতে পারে? ডেকে বসলেন, ‘জুরাইজ! তোর চেহারাটা একটু দেখব বাবা!’ জুরাইজ এবারও ভাবলেন, নামাজ পড়ব নাকি মায়ের ডাকে সাড়া দেব? রবের ভয়ে তার মন কাতর হয়ে উঠল। শেষমেশ আল্লাহর ইবাদতই তার কাছে শ্রেয় মনে হলো। মা ফিরে গেলেন। কষ্ট আর অপেক্ষার প্রহর আরও প্রলম্বিত হলো।
তৃতীয় দিন মা এলেন। আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মা বললেন, ‘জুরাইজ! আল্লাহ তোকে ব্যভিচারী নারীর মুখ না দেখিয়ে মৃত্যু না দিক।’ মা ব্যথা বুকে ফিরে গেলেন। জুরাইজ আল্লাহর দরবারে একনিষ্ঠ মনে ইবাদতে মগ্নই থাকলেন।
জুরাইজের বকরির রাখাল বকরিগুলো লালনপালন করত। সে বছর এক নারী জুরাইজের ডেরায় এলো। তাকে নিজ থেকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে ডাকল। নারীর কমনীয়তা ও রূপ-সৌন্দর্য সবই আল্লাহর গরিমা, মহিমা ও ইবাদতের কাছে তুচ্ছ। নারীটি ব্যর্থ হলো। ফিরে যাওয়ার পথে সেই রাখালকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করে এক বৃক্ষের ছায়ায় উভয়ে মানব-মানবীর তেষ্টা নিবারণ করল। গর্ভে এলো এক নবজাতক। সময়ের পরিক্রমায় সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হলো। লোকদের একত্র করে সেই নারী বলল, ‘তোমরা যাকে আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ ভাবো, সে এই শিশুটির বাবা। জুরাইজ আমার সঙ্গে অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে।’
এ কথা শুনে লোকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে জুরাইজের ডেরা ভেঙে মিসমার করে দিল। নামাজ পড়া অবস্থায় তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই নারীর সামনে আনা হলো। লোকেরা বলল, ‘তোমার মতো ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হবে, আমরা কখনও ভাবিনি।’ জুরাইজ বললেন, তোমরা আমাকে একটু সময় দাও, আমি নামাজ পড়ব। এরপর তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দেব।’
আল্লাহর দরবারে ধ্যানমগ্ন হয়ে একনিষ্ঠ মনে নামাজ পড়লেন জুরাইজ। কী সুন্দর দৃশ্য! ব্যভিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন মানুষের সে কী আল্লাহর মহিমায় অবগাহন। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সাক্ষাতের এক পরম সুন্দর দৃশ্য দেখল সবাই। নামাজ শেষ হলো। নয়ন জুড়ানো সেই নামাজ দেখেই লোকদের ক্ষোভ অনেকটা কমে গেল। কোলের শিশু মায়ের দুধ পান করছিল। জুরাইজ শিশুটির পেটে গুতা দিয়ে বললেন, ‘বলো, তোমার বাবা কে?’ শিশুটি স্তন থেকে মুখ সরিয়ে বলল, ‘অমুক রাখাল আমার বাবা।’
লোকেরা জুরাইজের এ অলৌকিকতা দেখে আশ্চর্য হলো। নিজেদের ভুল বুঝতে পারল। সবাই তার ইবাদতগাহ সোনা দিয়ে তৈরি করার ইচ্ছে ব্যক্ত করল। জুরাইজ বললেন, ‘আমার জীর্ণ কুটিরই শ্রেয়। মাটি দিয়েই আগের মতো তৈরি করে দাও।’ (বোখারি : ৩৪৩৬, মুসলিম : ২৫৫০, ফাতহুল বারি : ৬/৫৪৯)।
Post a Comment