ইজ্জতের দাম – রম্য গল্প


এক দরিদ্র মহিলার পুত্র মহাবিদ্বান হয়ে দেশের বাড়িতে ফিরে এল। মা তো মহাখুশী। ছেলে বিদ্বান-পণ্ডিত, ভাল চাকুরিও করে। ছেলেকে আদর-যত্ন করে মা বল্ল : ‘বাজান, বাজারে যাও, মিষ্টি আন, আমি গেরামে মাইনসেরে মিঠামুখ করামু।

ছেলে বাজারে যাচ্ছে মিষ্টি কিনতে-পথে এক ঝুনা বুড়ির সঙ্গে দেখা।

বুড়ি বলে : বাপরে, তুমি কই যাও?

বিদ্বান : বাজারে যাই।

বুড়ি : তয় ভাল কাম অইছে। বাজারে থেইকা ইজ্জতের দর জাইনা আইও। ফিরনের সময় আমার বাড়িত খবরডা দিয়া যাইও।

বিদ্বান মহামুশকিলে পড়ে। ইজ্জতের আবার দরদাম থাকে নাকি? তবে এ বিষয়ে তার অজ্ঞতারও পরিচয় দেয়া যায় না। সে যে পণ্ডিত! তাই অথৈ সাগরে পড়ে একটু কূলকিনারা পাওয়ার আশায় বলে : বুড়ি তোমার বাড়ি কৈ?

বুড়ি : ‘ইটের ওপরে ইটখলা তার ওপাড়ে মধুখলা তার ধারে কোবাকোবি তার লগে বাড়ির উপর বাড়ি মোর বাড়ি তার দক্ষিণের বাড়ি।

বিদ্বান এবার আরও ফাপড়ে পড়ে। এর মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝে না। তাই একটু আশার আলো পেতে বলে, তোমরা জাতে কি?’
বুড়ি ফোকলা দাঁত বের করে হেসে হেসে বলে : ‘আইতে অ মারে, যাইতে অ মারে এমনে অ মারে হেমনে অ মারে।
বিদ্বান-পণ্ডিত এসবের কিছুই বুঝতে না পেরে বাড়ি ফিরে আসে। মাকে সব কথা খুলে বলে।

মা হেসে বলে : বাজানরে, খালি এলেম দিয়া কাম অয় না, হেলেমও লাগে। ইজ্জত রক্ষা করে কাপড়ে বুড়ি বাজারে কাপড়ের দর কি তাই জানতে কইছে। ইটের ওপরে ইট মানে কুমার বাড়ি হাঁড়িপাতিল একটার ওপরে আর একটার পাজা কইরা রাখে কুমার বাড়িতে। আখের কলে আখ পিষে মিষ্টি রস বাইর করে, তাই হেই জায়গা অইল মধুখলা। আর ‘কোবাকোবি’ অইল কাঠ ফাড়নের কল। কলে দিবার আগে কাঠ কোবাইয়া সাইজ কইরা লয়। বাড়ির ওপর বাড়ি মানে কামারশালা। সেখানে লোহা গরম করে বাড়ি মাইরা সাইজ করে। সেই কামারশালার দক্ষিণের বাড়িটাই বুড়ির। আর বুড়ি জাতে জোলা।

তাঁত চালাইলে মাকু একবার ডাইনে যায় আবার বামে ফিরে আসে। তাইতে ঠক ঠক শব্দ অয় আমরা জোলা না বইলা তাই নাইল ঢক্কর’ও বলি। বাপরে, খালি বড় বড় কিতাবেই বিদ্যা নাই। চোখ-কান খোলা কইরা চলাফিরা কর, হেলেম অইব। সাধারণ বুদ্ধি ও দুনিয়ার জ্ঞান অইব।

No comments