অচেনা পুরুষ ও এক অসহায় রমণীর ঘটনা


এক অসহায় রমণী কাঁধে পানির মশক ঝুলিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে নিজের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একজন অচেনা পুরুষ সে অসহায় মহিলার কাছ থেকে মশকটি নিয়ে নিজের কাঁধে ঝুলিয়ে মহিলার সাথে সাথে চলতে লাগলেন। মহিলার ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তাদের মায়ের আগমনের অপেক্ষা করছিল।

এ মাছুম ছেলে-মেয়েরা দেখতে পেলো যে , একজন অচেনা-অজানা লোক তাদের মায়ের সাথে তাদের বাড়ির দিকে আসছেন। আর পানির মশকটি তার স্কন্ধে। বাড়িতে এসে অপরিচিত লোকটি পানির মশক মাটিতে রেখে মহিলাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন , আপনার অবস্থা দেখে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারা যায় যে , আপনার ঘরে কোনো পুরুষ লোক নেই। কিন্তু বলুন তো , আপনি এভাবে অসহায় হলেন কিভাবে ?

জবাবে মহিলা বললেন , আমার স্বামী ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। আলী ইবনে আবী তালিব তাকে ইসলামী বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। যুদ্ধে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এখন এ ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া জগতে আর আমার কেউ নেই ?

অচেনা লোকটি আর কোনো কথা বললেন না , বরং মাথা ঝুকিয়ে ঘরের বাইরে চলে গেলেন। কিন্তু তিনি এরপর শুধু এ অসহায় স্ত্রী লোকটি ও তার কচি কচি শিশু সন্তানের কথাই ভাবতে থাকলেন। রাতে তার নিদ্রা হলো না। সকালে তিনি একটি থলিতে কিছু গোশত , আটা , খুরমা ও আরো কিছু খাদ্যদ্রব্য নিলেন এবং সে অসহায় রমণীর বাড়িতে গেলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিলেন। মহিলা ভেতর থেকে জিজ্ঞাসা করলেন , কে আপনি ?

আগন্তুক জবাব দিলেন , আমি খোদার সে বান্দা , যে কাল আপনার পানির মশক এনে দিয়েছিলাম। আজ আমি আপনার ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু খাদ্য-খাবার নিয়ে এসেছি।

মহিলা ভেতর থেকে বললেন , হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। আমার ও আলী ইবনে আবী তালিবের মধ্যে আল্লাহই ফয়সালা করবেন।

অতঃপর দরজা খুলে দিলেন। অচেনা লোকটি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন। খাদ্য সামগ্রীগুলো মহিলাকে দিয়ে বললেন , আমার মন চাচ্ছে যে , কিছু সওয়াবের কাজ করবো। অতএব , আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি নিজে আটা খামির করে রুটি বানিয়ে দেবো অথবা আমি ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনা করি আর আপনি আটা খামির করে রুটি বানিয়ে নিন।

মহিলা বললেন , আচ্ছা ঠিক আছে আমিই আটা খামির করে রুটি তৈরি করছি আর আপনি ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করুন।

তারপর ভদ্র মহিলা আটা খামির করে রুটি তৈরিতে ব্যস্ত হলেন। আর অপরিচিত লোকটি থলে থেকে খুরমা বের করে নিজের হাতে এ ছেলেমেয়েদেরকে খুরমা খাওয়াতে লাগলেন। নিজের হাতে বাচ্চাদেরকে খুরমা খাওয়াবার সময় তিনি তাদেরকে বার বার এ কথাটাই বলতে থাকলেন , হে আমার প্রিয় সন্তানরা! আলী ইবনে আবী তালিবকে মাফ করে দাও। যদিও তিনি তোমাদের ব্যাপারে কার্পণ্য করেছেন।

এতোক্ষণে আটা খামির হয়ে গেছে। সে মহিলা ডেকে বললেন , হে আল্লাহর বান্দা! আটা খামির করা হয়ে গেছে। এবার তন্দুর জ্বালিয়ে দিন।

অচেনা লোকটি সাথে সাথে উঠে গিয়ে তন্দুরে আগুন ধরালেন। আগুনের ভাপ তন্দুর থেকে বের হতে লাগলো। লোকটি নিজের চেহারাকে আগুনের কাছে নিয়ে নিজে নিজে এভাবে বলতে লাগলেন , আগুনের তাপের স্বাদ আস্বাদন করো। একজন বিধবা রমণী ও ইয়াতিম বাচ্চাদের খোঁজ খবর নেবার ব্যাপারে কার্পণ্য করার এটাই শাস্তি।

তিনি যখন এ কাজে ব্যস্ততখনি প্রতিবেশী এক মহিলা এ বাড়িতে এলো এবং ঘরে ঢুকেই এ অপরিচিত লোকটিকে চিনতে পারলো। তারপরে সে বিধবা মহিলাকে বললো , ধিক তোমার প্রতি! তুমি কি এ লোকটিকে চেনো না ? তাকে দিয়ে এভাবে কাজ করিয়ে নিচ্ছো ? তিনি হলেন আমীরুল মু’ মিনীন হযরত আলী ইবনে আবী তালিব।

অসহায় বিধবা মহিলাটি হযরত আলী (আঃ) এর সামনে এসে বলতে লাগলেন , আমি আমার এ কাজের জন্য আপনার নিকট খুবই লজ্জিত। আমি আপনার নিকট ক্ষমা চাইছি।

আলী (আঃ) বললেন , না! আমিই বরং আপনার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। কেননা আমি আপনার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে কার্পণ্য করেছি।৮৭

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহহারী

No comments