আপন সোয়ামী – মজার গল্প
গ্রামবাংলার রঙ্গরসিতার এ সংযোজন এক বিবাহ-বিচ্ছেদ মামলার কাহিনী। এ ধরনের মামলা-মোকদ্দমা গ্রামবাংলায় মাঝে মধ্যেই হয়ে থাকে। আর আমরা হরহামেশা পাশ্চাত্যের বিবাহে ঘন ঘন তাতে ছেদ টেনে পুনরায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার এবং যখন খুশি আবার তা ছিন্ন করার কেচ্ছাও এন্তার শুনে থাকি।
আমাদের গ্রামাঞ্চলে নিম্নবিত্তের মধ্যে এবং শহরের বস্তি এলাকায় যখন তখন বিয়ে করার এবং আবার তা ভেঙ্গে দেবার অনেক ঘটনা রয়েছে। এর পাশাপাশি স্ত্রীর উপর অত্যাচার – নির্যাতন, তাকে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনসহ নানা অপকর্ম রয়েছে।
গ্রামবাংলার এমনি এক বিবাহ বিচ্ছেদ এবং তা বাতিল করার মামলার ঘটনা নিয়ে এ কাহিনী। মামলা সাধারণ হলেও তা অসাধারণ হয়ে যায় মামলার বাদীপক্ষের উকিলের কারণে। সে মামলার উকিল ছিলেন স্বয়ং শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক।
মামলার বিবরণ হল, খোরশেদ শেখের বউ মতিবিবি শুধু স্বামীগৃহ ত্যাগই করে নাই, খোরশেদের স্বামিত্বের দাবিও অস্বীকার করেছে।
মতিবিবির উকিল তাকে সওয়াল করতে গিয়ে বলেন : মতিবিবি, দেখত এই খোরশেদ শেখকে তুমি চেন কিনা?
মতিবিবি : হুজুর যে কি কন, কোথাকার কোন বেগানা পুরুষ, তারে আমি কেমনে চিনুম!
উকিল : সে তো দাবি করে সেই তোমার স্বামী।
মতিবিবি : হায় হায় কি সব্বনাইশা কথা গো! জীবনে যারে চোক্ষে দেখি নাই, সে আবার সোয়ামী অয় ক্যামনে?
উকিল : খোরশেদ তো তোমারে তার বৈধ স্ত্রী হিসাবে তার বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। তুমি যাবে?
মতিবিবি : মিনসের মুখে ঝাঁটা মারি। আমি হ্যার সঙ্গে যামু কোন দুঃখে! হে আমার কে!
মতিবিবির উকিল মহকুমা হাকিমকে বলেনঃ কেস পরিষ্কার। আমার মক্কেল খোরশেদকে চিনেই না—স্বামিত্বের দাবির প্রশ্নও তাই আসেনা।
এর পর হাসি হাসি মুখে উঠে দাড়ান খোরশেদ শেখের উকিল এ, কে, ফজলুল হক। তিনি কৌতুকভরা হাসিমুখে মতিবিবির দিকে এক ঝলক তাকিয়েই যেন মতিবিবির অন্তরের অন্তঃস্তল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে ফেলেন। তারপর মতিবিবিকে বলেন : মা, মতিবিবি গো! কত মামলা করলাম, কতজনেরে জেরা করলাম, কিন্তু তোমার মত একটা ভাল মানুষ আমি জীবনে দেখলাম না।
মতিবিবিঃ হুজুরে আমারে ভাল মানুষ কইছে! দ্যাশের মানুষ হলেই আমারে ভাল কয়।
শেরে বাংলা : ভাল মানুষরে লোকে ভাল কইবো না!
মতিবিধিঃ কিন্তু হুজুর, ময়মুরব্বির সামনে কলমা পইড়া তিন বছর খোরশেইদা গোলামের ঘর করলাম। হে আমার আপন সোয়ামী অইয়াও আমারে কোন সুমে (সময়ে) ভাল মানুষ কয় না। আপনেই কন হুজুর, হেরে কেমনে আমি স্বীকার করি?
শেরে বাংলা : আমার আর কিছু বলার নাই। রায় দেবেন জজ সাহেব।
Post a Comment