জ্বিনের বাদশাহ্ – হুমায়ূন আহমেদ

জ্বিনের বাদশাহ্ – হুমায়ূন আহমেদ

জ্বিনের বাদশাহর সঙ্গে বিশেষ সখ্য আছে এমন একজন আমার সামনে বসে আছে। তার নাম ছালাম। বাড়ি ফরিদপুর। মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ। মাথায় বাবরি চুল, মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখে যাত্রার সখীদের মতো টেনে টেনে সুরমা দেওয়া। পরনে নীল লুঙ্গির উপর ধবধবে সাদা হাফহাতা গেঞ্জি। মানুষটার দিকে তাকালে সাদা গেঞ্জি প্রথমে চোখে পড়ে। মনে হয় মূর্তিমান সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপন।

আমি তখন সুখাইয়ের জমিদার বাড়ির ঘাটে বসা। ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’র শুটিং করতে গিয়েছি। ছাদের রেলিংয়ে শুটিং হবে। ঘেঁটুপুত্র রেলিংয়ের উপর দিয়ে হাঁটবে।

ক্যামেরাম্যান মাহফুজ বলল, ক্রেন বসাতে দেরি হবে। স্যার, আপনি রেস্ট নিন। চা-সিগারেট খান। সব রেডি হলে আপনাকে ডাকব।

আমি ঘাটে বসে সময় কাটানোর জন্যে বই পড়ছি। বইয়ের নাম Unnecessary informations (অপ্রয়োজনীয় তথ্য)। বিচিত্র সব তথ্য পড়ে যথেষ্টই আনন্দ পাচ্ছি। স্পেনের রানী ইসাবেলা সমগ্র জীবনে দুবার মাত্র স্নান করেছেন, এই তথ্য যখন পড়ছি তখনই জ্বিনের বাদশাহর উপদ্রব। এই উপদ্রব থেকে রক্ষার উপায় হচ্ছে ধমক দিয়ে ছালাম নামধারীকে বিদায় কর। আমি তা না করে মুখের উপর বই ধরে থাকলাম। আমার কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে ছালাম নিজ থেকেই বিদায় হবে। দিনের শুরুতেই ধমকা-ধমকি করতে ইচ্ছে করছে না।

স্যারের কাছে আমি একটা আবদার নিয়া আসছি।

আমি বই থেকে মুখ সরামাম না। বই থেকে অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে থাকলাম। যুক্তরাষ্ট্রের ডাকটিকিটে প্রথম যে মহিলার ছবি ছাপা হয় তিনি স্পেনের রানী ইসাবেলা।

স্যার, আপনার নিকট একটি আবদার করেছিলাম।

বই থেকে চোখ না সরিয়েই আমি বললাম, কী আবদার?

জ্বিনের বাদশাহ্ ফিল্মের শুটিং দেখার খায়েস করেছেন। যদি অনুমতি দেন।

এই কথা শোনার পর আর বইয়ে চোখ রাখা যায় না। আমি বই নামিয়ে রেখে বললাম, কে ছবির শুটিং দেখতে চায়?

জ্বিনের বাদশাহ্। উনার নাম হেকমত শাহ।

ও আচ্ছা।

অনুমতি ছাড়াই উনি শুটিং দেখতে পারেন। তাকে তো কেউ দেখবে না। উনি অদৃশ্য।

তাহলে অনুমতি চাচ্ছেন কেন?

জ্বিনের বাদশাহ্ বলে কথা। উনার একটা ইজ্জত আছে।

আমি বললাম, অনুমতি দিলাম। তাকে শুটিং দেখতে বলো।

তার জন্যে একটা চেয়ারের ব্যবস্থা কি করা যায় স্যার? চেয়ারে বসে শুটিং দেখলেন।

আমি মুখের সামনে বই ধরলাম। একে আর প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। আমি পড়ছি–স্থলভূমিতে এক মাইল হলো ৫২৮০ ফুট, আর পানিতে এক নটিকেল মাইলের দৈর্ঘ্য ৬০৮০ ফুট। এই তথ্যটাকে তেমন অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে না।

স্যার, জ্বিনের বাদশাহ্ আপনাকে সালাম দিয়েছেন। উনি বলেছেন, আসোলামু আলায়কুম। উনার সালামের জবাব যদি দেন উনি খুশি হবেন।

সালামের জবাব দেওয়ার আগেই প্রডাকশন ম্যানেজার কামরুল এসে জানাল শট রেডি হয়েছে। আমি উঠে গেলাম। জ্বিনের বাদশাহ্ হেকমত শাহকে ওয়ালাইকুম সালাম বলা হলো না।

শটটা জটিল ও বিপজ্জনক। ঘেঁটুপুত্র কমলা তিনতলার পিচ্ছিল রেলিং ধরে হাঁটবে। যে-কোনো সময় স্লিপ কেটে পড়ে যেতে পারে। নিচে ত্রিপল ধরে লোকজন আছে। পড়ে গেলে আটকাবে। জটিল শটের সময় তুচ্ছ সব ঝামেলা দেখা যায়, যার জন্যে প্রস্তুতি থাকে না। এখানেও তা-ই হলো। কমলা হাঁটা শুরু করতেই একটা দাঁড়কাক উড়ে এল। কাকটার ভাবভঙ্গি ভালো না। তার চেষ্টা কমলার মাথায় ঠোকর দেওয়া।

‘কাট’ বলে শট এনজি করা হলো। কাক দূর করার চেষ্টা চলতে লাগল। কেউ ঢিল ছুড়ছে, কেউ ক্যানেস্তারা পিটাচ্ছে। কাক ভয় পেয়ে উড়ে চলে গেল, কিন্তু শট শুরু হতেই সে উড়ে এল। নিশ্চয়ই আশপাশের কোনো গাছে তার বাসা। কমলা রেলিং ধরে এগুতেই সে ভাবে তার বাসার ডিম চুরি করতে কেউ আসছে। যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত অনেক ঝামেলা করে এলোমেলোভাবে শট নেওয়া হলো। আমি লব্রেক দিলাম।

সবাই একসঙ্গে লাইন ধরে খেতে বসেছি। চোখে পড়ল জ্বিনের বাদশাহর বন্ধু ছামাদ আয়োজন করে খাচ্ছে। আমি প্রডাকশন ম্যানেজারকে বললাম, ওই লোক ইউনিটের কেউ?

ম্যানেজার বলল, জি-না স্যার। সে বলেছে আপনি নাকি অর্ডার দিয়েছেন যতদিন শুটিং চলবে সে তিন বেলা খাবে।

আমি বললাম, ঠিক আছে।

ম্যানেজার চিন্তিত গলায় বলল, আপনি কি এমন কথা বলেন নাই? কী সর্বনাশ!

আমি বললাম, সর্বনাশের কিছু নাই। খাক তিন বেলা। শুধু বলে দাও–আমাকে যেন বিরক্ত না করে, আমার ধারে কাছে যেন না আসে।

ম্যানেজার বলল, স্যার আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। আপনার দশ গজের ভেতর গেলে তার ঠ্যাং ভেঙে দিব।

সোনামুখি সুঁই (সবচেয়ে সূক্ষ্ম সুঁই) হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়ার কথা শোনা যায়। ছামাদের ব্যাপারেও তা-ই দেখলাম। সে অল্প সময়ের ভেতরই প্রডাকশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে গেল। সে ভিড় সামলাচ্ছে, শিল্পীদের মাথার উপর ছাতি ধরছে, খাবার পরিবেশন করছে। একদিন দেখলাম প্রডাকশন ম্যানেজারের গায়ে সাবান ডলে গোসল করিয়ে দিচ্ছে।

সিনেমার শুটিং-এ সিগারেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কে ফ্রি সিগারেটের প্যাকেট পাবে কে পাবে না তা নির্ধারিত। এই নিয়ে হইচই ঝুট-ঝামেলা হয়। কেউ কেউ রেশনিং মানতে চায় না। ফ্রি সিগারেটের জন্যে দেনদরবার। একদিন দেখলাম এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্ব ছামাদের হাতে চলে গেছে। সে মেকাপম্যানের সঙ্গে সিগারেট নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছে।

আমারে আপনে যদি চাইনিজ কুড়াল দিয়া কোপ্তদেন তারপরেও সিগারেট মিলবে না। ইউনিটের নিয়মে আমারে চলতে হবে টাকা দেন, আপনের সিগারেট নিয়ে আসব।

আমি ছামাদের উত্থান নিয়ে ঘামালাম না। ফিল্ম ইউনিটে উত্থান ও পতন স্বাভাবিক ঘটনা। ছামাদ যে জ্বিনের গল্প করে আমাকে বিরক্ত করছে না, এতেই আমি খুশি।

‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ ছবির আউটডোর শুটিং সন্ধ্যার পরপর শেষ হয়ে যেত। রাতের সব কাজ রাখা হয়েছিল সেটের জন্যে। দুর্গম হাওরে লাইট নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু দৈত্যাকৃতি জেনারেটর নিতে পারি নি। আমাদের সন্ধ্যার পর কিছুই করার থাকেনা। অভিনেতা-অভিনেত্রীরা দরজা বন্ধ করে ঘুমান। এই বিষয়টি শুধুমাত্র ফিল্মের শুটিংয়ের বেলায় দেখা যায়। মনে হয় ৩৫ মি.মি. ক্যামেরার সামনে অভিনয় করা স্লিপিং ট্যাবলেট হিসেবে কাজ করে।

ক্রু মেম্বার আর প্রডাকশনের ছেলেমেয়েরা অবসরে গানবাজনা করে। তাদের সঙ্গে সবসময় হারমোনিয়াম ও তবলা থাকে।

এক সন্ধ্যায় দেখি গানবাজনার আসরে আমাদের ছালাম বাবরি চুল দুলিয়ে গান করছে—কাজল ভোমরা রে কোনদিন আসিবে ফিরে কয়া যাও কয়া যাও। আব্বাসউদ্দীনের বিখ্যাত গান।

ছালাম সুর খানিকটা এদিক-ওদিক করেছে, কিন্তু গাইছে চমকার। তার গলা খানিকটা মেয়েলি হলেও সুর আছে। স্ট্যান্ডিং নোট কাঁপছে না। গানের মূল শক্তি আবেগ। সেই আবেগেরও কোনো ঘাটতি দেখলাম না, বরং খানিকটা বাড়াবাড়ি দেখলাম। আজকাল বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নানান ধরনের গানের প্রতিযোগিতা হয়–রাজমিস্ত্রিদের গান, রাজমিস্ত্রির জোগালিদের, ট্রাক ড্রাইভার, হেলপারদের গান, এক চোখ নষ্ট ভিক্ষুকদের গান। প্রতিযোগিতার অভাব নেই। ছালামের গান শুনে আমি নিশ্চিত যে, এই ধরনের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন বা রানারআপ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আমি ছালামকে ডেকে পাঠালাম। আমাদের মধ্যে নিম্নলিখিত কথাবার্তা হলো—

তোমার গানের গলা তো খুব সুন্দর!

জে স্যার। এই গান আমারে খাইছে। বিরাট বিপদে আছি।

কী রকম বিপদ?

লম্বা হিস্টোরি। স্যার বলব?

সারসংক্ষেপ করে বলো।

একদিন নিশিরাইতে মনটা উদাস হয়েছিল। গানে টান দিলাম। আব্দুল আলিম সাহেবের গান–’হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ পাখিটি ছাড়িল কে?’ এই সময় আমার মাথার উপরে দিয়া উইড়া যাইতেছিল জ্বিনের বাদশাহর পঞ্চম মেয়ে। নাম বিবি মোহতেরমা। সে আসমান থাইকা নামল। অপূর্ব রূপবতী মেয়েছেলের বেশ ধরল। লইজ্জার বিষয় কি জানেন স্যার, মেয়েছেলের বেশ ঠিকই ধরেছে, কিন্তু শইল্যে কাপড় নাই। আমি দুই হাতে চোখ ঢাইকা বললাম, কন্যা, তোমার পরিচয়?

সে বলল, আমি জিনের বাদশাহর পঞ্চম কন্যা। আমার নাম বিবি মোহতেরমা। আপনের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছি। আপনে আমার সঙ্গে কোহকাফ নগরে চলেন। সেখানে আমি পিতার অনুমতি নিয়া আপনারে শাদি করব। তখন আমি…

গল্পের এই পর্যায়ে ছালামকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, তুমি এখন যাও।

ছালাম আহত গলায় বলল, আর শুনবেন না?

আমি বললাম, না।

বিরাট ইন্টারেস্টের জায়গাটা এখনো বলি নাই।

বলতে হবে না, তুমি বিদায় হও।

ছালাম বিমর্ষমুখে চলে গেল। আমি সিগারেট ধরাতে ধরাতে ভাবছি, এই ধরনের গল্প সে কেন বানাচ্ছে?

দু’টা কারণ হতে পারে। প্রথম কারণ, অন্যের কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করা। জ্বিনের বাদশাহর সঙ্গে যার মেলামেশা সে গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই।

দ্বিতীয় কারণটা মানসিক। এক ধরনের ডিলিউশনের শিকার হয়ে কিছু মানুষ এই ধরনের কাণ্ড করে। সমাজে ডিলিউশনগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা কম না। ‘জনগণ তার জন্যে পাগল’–এই ডিলিউশনে অনেক রাজনীতিবিদ ভোগেন।

আমার এক বন্ধু ভাবেন, যে-কোনো মেয়ের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে সেই মেয়ে আধাপাগল হয়ে ছুটে আসবে। এমনই তার চোখের সম্মোহনী শক্তি। প্রবল সম্মোহনী শক্তির কারণে ভীত হয়েই তিনি সচরাচর কোনো তরুণীর চোখের দিকে তাকান না। চোখে চোখ পড়লে চট করে চোখ নামিয়ে নেন। এটাও ডিলিউশন।

বাদ থাকুক তত্ত্বকথা, মূল গল্পে আসি।

শুক্রবার। জুমার নামাজের জন্যে দু’ঘণ্টা শুটিং-বিরতি। আমি গাছের ছায়ায় চেয়ারে পা তুলে আরাম করে বসে আছি। মন আনন্দে পরিপূর্ণ। খবর পেয়েছি শাওন ঢাকা থেকে ভোরবেলা তার দুই পুত্রকে নিয়ে রওনা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার। উপস্থিত হওয়ার কথা। দুইপুত্রকে নিয়ে অনেক দিন পর চটকা চটকি করা যাবে।

হঠাৎ বিরাট হইচই।

আমি লাফ দিয়ে উঠলাম। ফিল্ম ইউনিটে অতি তুচ্ছ ঘটনা লঙ্কাকাণ্ডে রূপ নেয়। মাথা ফাটে, রক্তারক্তি হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব সমাধান। যে যার কাজ করছে। সবাইকে আনন্দিত মনে হয়। কারণ–দুর্ঘটনা ঘটেছে রক্তপাত হয়েছে, ছবি হিট হবে।

হইচইয়ের কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দেখি, ছবি হিট করার ব্যবস্থা ভালোমতোই সম্পন্ন। ছামাদ মেঝেতে পড়ে আছে। তার ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। সে কোনো সাড়াশব্দ করছে না। আমি আঁতকে উঠে বললাম, মারা গেছে নাকি?

ছালাম কোঁকাতে কোঁকাতে বলল, জিন্দা আছি স্যার।

হয়েছে কী?

মোবাইল ফোন চুরি করেছি, এইজন্যে মাইর দিয়েছে।

তুমি চুরি করেছ?

জি স্যার।

ঘটনা জানলাম–আমাদের এক অভিনেতার ব্যাগ রাখতে দেওয়া হয়েছিল তার কাছে। ব্যাগ, মানিব্যাগ, সিগারেটের প্যাকেট এবং আইফোন নামের দামি মোবাইল। সবই আছে, শুধু আইফোন নেই।

আমি ছালামকে বললাম, তুমি স্বীকার করেছ ফোন চুরি করেছ, ফেরত দিচ্ছ না কেন?

একটু অসুবিধা আছে।

বলো কী অসুবিধা?

সবার সামনে বলা যাবে না। তয় অপনারে বলব।

লোকজন সরালাম। ছালাম কষ্টে উঠে বসল। গলা নামিয়ে বলল, বিবি মোহতেরমা মোবাইলটা নিয়ে চলে গেছে। জিনিসটা তার খুবই পছন্দ হয়েছে। জ্বিনের বাদশাহ্র আদরের মেয়ে, সে একটা জিনিস চাইলে তো না করতে পারি না।

তাকে বলো ফেরত দিতে।

সে তো স্যার আশপাশে নাই। যখন আসবে তখন ফেরত দিতে বলব।

আমি বললাম, জ্বিন মেয়ে মোবাইল নিয়ে গেছে, এ ধরনের হাস্যকর কথা আর যে-ই বিশ্বাস করুক আমি করছি না। তুমি আইফোনটা কোথাও লুকিয়ে রেখেছ, বের করে দাও।

স্যার, আমার কথা বিশ্বাস করেন–সে চেয়েছে বলে দিয়েছি। জ্বিনদের কাছে যন্ত্রপাতি নাই, যে কারণে যন্ত্রপাতির দিকে তাদের নজর। আমার একটা টর্চলাইট ছিল, নিয়া গেছে। ব্যাটারি শেষ হলে আমার কাছে ব্যাটারি নিতে আসে। ব্যাটারি কিনতে কিনতে আমি পথের ফকির হয়েছি।

এই উন্মাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালানো সময়ের অপচয়। আমি নিজের জায়গায় ফিরে এলাম। প্রডাকশন ম্যানেজারকে বললাম, মারধর যেন করা না হয়।

প্রডাকশন ম্যানেজার বলল, এর বিষয়টা আপনি মাথা থেকে অফ করে দেন। আমি ব্যবস্থা নিতেছি। মারধর করা হবে না, সে আপসে জিনিস কোথায় লুকায়েছে বলে দিবে।

কী ব্যবস্থা নিচ্ছ।

একটা ঘরে তালাবন্ধ করে রাখব। খানা পানি দিব না। আগে মোবাইল বাইর করবে, তারপর রিলিজ।

শুটিং শেষ হলো সন্ধ্যায়। ছালামের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি হাতে-পায়ে দড়ি বেঁধে একটা ঘরে তাকে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমি বললাম, তাকে তো তালাবন্ধ করেই রেখেছ, আবার দড়ি দিয়ে বাঁধার দরকার কী?

প্রডাকশন ম্যানেজার কামরুল বলল, ভয় খাবে, এইজন্যে দড়ি দিয়ে বেঁধেছি।

ছালামকে দেখে মনে হলো না সে ‘ভয় খাচ্ছে’। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, জ্বিনের বাদশাহর কাছে খবর চলে গেছে, উনি আমারে রিলিজ করে দেবেন।

কামরুল বলল, জ্বিনের বাদশাহ তোর ‘…’ ঢুকায়ে দিব। (পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, শরীরের কোন পথে জ্বিনের বাদশাহ ঢোকানো হবে।)

আমি কামরুলকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললাম, ভয় দেখাতে চাচ্ছ দেখাও, কিন্তু সকালবেলা অবশ্যই ছেড়ে দিবে।

কামরুল বলল, সকাল হোক, তারপর দেখা যাবে।

সকালে নাশতা খেয়ে শুটিংস্পটে যাওয়ার জন্যে গাড়িতে উঠেছি। ড্রাইভার মেহেদি বলল, খবর পাইছেন স্যার? বদটা তালা ভাইঙা পালাইছে।

ছালামের কথা বলছ?

জি স্যার। সবাই বলাবলি করতেছে জ্বিন তালা ভাঙছে। আমরা জ্বিনের ঝামেলায় পড়লাম। কী ঘটে কে জানে!

আমি জবাব দিলাম না। মেহেদির নাপিতের মতো স্বভাব। অকারণে কথা বলে। তার প্রতিভা ইউনিটের তুচ্ছ কথাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে পত্রিকাওয়ালাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। তাকে এই মুহূর্তে না আটকালে পত্রিকায় খবর আসবে ‘ঘেঁটুপুত্র কমলার ইউনিটে জ্বিনের হামলা’।

আমি বললাম, মেহেদি শোনো! জ্বিন তালা ভাঙে নি। ছালামের কোনো বন্ধুই গোপনে এই কাজ করেছে। এই বিষয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।

মেহেদি বলল, কামরুল ভাই বিরাট আতঙ্কের মধ্যে–জ্বিন তারে ধরবে। শুনেছি কামরুল ভাই ইউনিট ছাইড়া চলে যাবে।

চলে গেলে চলে যাবে। আমি বলেছি জ্বিনবিষয়ক আলোচনা বন্ধ। যে এই নিয়ে আলোচনা করবে তাকেও ইউনিট ছেড়ে চলে যেতে হবে।

আমার হার্ডলাইনে যাওয়ার কারণ আছে। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির শুটিং করছি নুহাশপল্লীতে। শুটিংয়ের এক পর্যায়ে জ্বিনের উপদ্রপের কথা ছড়িয়ে পড়ল। নানান। ধরনের কথাবার্তা আমার কানে আসতে লাগল।

তখন নুহাশপল্লী গজারি বনের জঙ্গল। আমি জঙ্গল পরিষ্কার করে পছন্দের গাছপালা লাগানো শুরু করি নি। ইলেকট্রিসিটি নেই, নিজস্ব জেনারেটরও নেই। শুটিংয়ের জন্যে ভাড়া করা জেনারেটরই ভরসা।

রাতে ঘরে ঘরে হারিকেন বা মোমবাতি জ্বালানো হয়। আঁধারি পরিবেশ। ভূত প্রেত-জ্বিন উঁকি মারার অবস্থা। হঠাৎ করেই জ্বিনের গুজব দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল।

প্রথম গুজব ছড়ালেন বিলকিস বানু নামের সত্তর বছর বয়সী এক অভিনেত্রী। শুরুর দিকের পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে তিনি সহনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করতেন। একসময় ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়লেন। বৃদ্ধবয়সে তার স্থান হলো এফডিসির গেটে। মোটামুটি ভিক্ষাবৃত্তি। আমি তাঁকে সাহায্য করার জন্যেই ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে অভিনয় করার জন্যে ডাকলাম। তার স্থান হলো মূল বাংলোয়, ছবির কলাকুশলীদের সঙ্গে। তখন নুহাশপল্লীতে তেমন কোনো স্থাপনা ছিল না। লিচুতলায় ছিল খুঁটির উপরে কাঠের ঘর। আমি থাকতাম লিচুতলা থেকে কিছুটা দূরে ছোট্ট কাঠের ঘরে। আরেকটা কাঠের ঘর ছিল প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের (শাওন, জাহিদ হাসান, মাহফুজ) জন্যে।

বিলকিস বানু বলা শুরু করলেন, এই অঞ্চল জ্বিনে ভর্তি। এরা সবাই শান্ত প্রকৃতির জ্বিন। ফিল্ম ইউনিটের কারণে এদের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। এরা এখন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিলকিস বানুর এই কথার পর অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় জ্বিন দেখা শুরু করল।

লাইটের লোকজন দলবেঁধে আমার কাছে এসে বলল, তারা অনেকগুলি মেয়ের একসঙ্গে খিলখিল হাসি শুনেছে।

জেনারেটরের লোকজন বলল, তারা বাথরুমে যেতে পারে না। বাথরুমের দরজা বন্ধ করলেই দরজায় ধাক্কা পড়তে থাকে। দরজা খুললে দেখা যায় কেউ নেই। জেনারেটর দলের প্রধান বলল, স্যার, আমরা এখানে কাজ করব না। জেনারেটর নিয়ে চলে যাব। আপনি অন্য জেনারেটর নিয়ে কাজ করুন।

আমি জেনারেটরের খোঁজে লোক লাগালাম। এক সন্ধ্যায় গাজীপুরের এক মাওলানা আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি আমাকে বললেন, আমি একটা বিশেষ খবর শুনে আপনার কাছে এসেছি। আপনাকে সাবধান করতে এসেছি।

আমি বললাম, বলুন কী খবর শুনেছেন?

রাত ঠিক বারোটার সময় আপনার ঘরের বান্দারায় নাকি চারটা কুকুর এসে শুয়ে থাকে?

আমি বললাম, কুকুরের সঙ্গে তো ঘড়ি নেই যে ঘড়ি দেখে ঠিক বারোটার সময় আসবে। তবে কয়েকটা কুকুর রাতে বারান্দায় শুয়ে থাকে। ভোরবেলা চলে যায়।

এত ঘর থাকতে আপনার ঘরের সামনেই শুয়ে থাকে কেন?

আমি বিরক্ত গলায় বললাম, এটা তো কুকুরেরা ভালো বলতে পারবে। আমি পারব না।

তার পরেও আপনার ধারণাটা কী?

আমি বললাম, কুকুর কেন আমায় ঘরের বারান্দায় শুয়ে থাকে এটা নিয়ে আমি গবেষণা করতে রাজি না।

মাওলানা বললেন, আপনি মনে হয় আমার কথায় রাগ করেছেন।

আমি বললাম, রাগ করি নাই, তবে বিরক্ত হয়েছি।

মাওলানা বললেন, আমি আর বিরক্ত করব না। রাতে কুকুরগুলা এলে ওদের দেখে চলে যাব।

এত রাতে যাবেন কীভাবে?

আমি রিকশা নিয়ে এসেছি।

ঠিক আছে কুকুর দেখুন। শুটিংস্পটে মানুষজন নায়ক-নায়িকা দেখতে আসে, আপনি কুকুর দেখতে এসেছেন। খারাপ কী!

মাওলানার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের কারণে নিজেরই বেশ মন খারাপ হলো। আমি জ্বিনের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে আছি বলে অন্যের উপর রাগ করার কোনো মানে হয় না। আমি মাওলানাকে আমার সঙ্গে ডিনার করতে বললাম। তিনি রাজি হলেন না। চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আমাকে বললেন, আপনার বারান্দায় যে চারটা কুকুর রাতে এসে থাকে এরা কুকুর না। জ্বিন।

আমি বললাম, ও আচ্ছা। শুনে ভালো লাগল।

জিন একমাত্র প্রাণী যারা ইচ্ছামতো অন্যরূপ নিতে পারে। মানুষের রূপ নেয়। তবে সবচেয়ে পছন্দ করে সাপ ও কুকুরের রূপ নিতে। আমার ধারণা, আপনার ঘরে সাপের রূপ ধরেও কিছু জ্বিন আছে।

আমি বললাম, ভাই, আমার ঘরে কোনো সাপ নাই। সাপ আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। ঘরের চারদিকে কার্বলিক অ্যাসিড দেওয়া। আমার খাটের নিচে মুখ খোলা কার্বলিক অ্যাসিডের শিশি। আমার বাথরুমেও কার্বলিক অ্যাসিড।

মাওলানা বললেন, আমি আপনার জন্যে একটা তাবিজ নিয়ে এসেছি। তাবিজটা কি রাখবেন?

আমি বললাম, না।

গলায় বা হাতে পরতে হবে না, আপনার ঘরে ঝুলিয়ে রাখলেই হবে।

আমি আবারও বললাম, না।

মাওলানা মন খারাপ করে চলে যাওয়ার পর মনে হলো তাবিজটা রেখে দিলেও হতো।

নুহাশপল্লীতে জ্বিনবিষয়ক বিশৃঙ্খলা চরমে উঠল। মেকাপম্যান তার অ্যাসিসটেন্টকে নিয়ে কাউকে কিছু না বলে গোপনে পালিয়ে গেল। জেনারেটরের লোকজন আমার কাছে বিদায় নিয়েই গেল। কোন উপায় না দেখে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির শুটিং বন্ধ করে দিলাম। ঘোষণাটসা দেওয়া হলো দুপুরে, সন্ধ্যার মধ্যে নুহাশপল্লী খালি। আমার সঙ্গে আছে দুজন কর্মচারী–নুরুল হক আর রফিক। তখন নুহাশপল্লীতে এই দুজন কর্মচারীই ছিল আমি তাদের বললাম, সবাই চলে গেছে, তোমরা আছ কেন? তোমরাও চলে যাও।

রফিক বলল, আপনি যাবেন না?

আমি বললাম, না।

নুরুল হক বলল, স্যার, আপনি চলে যান। জ্বিনের উপদ্রব কমুক, তারপর খবর দিলে আসবেন।

আমি বললাম, আমি থাকব। জ্বিনের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া আছে। তোমরা চলে যেতে চাইলে চলে যাও। থাকলে থাকো।

রফিক চলে গেল। নুরুল হক আমার সঙ্গে ঝুলে রইল।

রাত ন’টা। নুরুল হক রান্না চড়িয়েছে। আমি লিচু বাগানের বেদিতে বসে আছি। হঠাৎ ঝড়ের মতো উঠল। লিচুগাছের পাতায় বাতাসের শব্দ হতে লাগল। লিচু বাগানে চারটা লিচুগাছ। আমি যে গাছের নিচে বসেছি তার পাতা ও ডাল কাঁপছে, অন্য গাছের পাতায় বাতাসের কাঁপন নেই। ভয়ে আমার কলিজায় কাঁপুনি শুরু হওয়ার কথা, কিছুই হলো না। মনে হয় চিন্তায়, দুঃখে, ক্ষোভে আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল।

এখন অদ্ভুত কথা বলি। লিচুতলাতেই জ্বিন নামক Entity-র সঙ্গে আমার কথা হয়। বিষয়টা আর কিছুই না, আমার হেলুসিনেশন। প্রবল শোক, মানসিক চাপ মানুষকে হেলুসিনেশনের জগতে নিয়ে যায়। সন্তানহারা পিতামাতা প্রবল মানসিক যাতনার সময় তার মৃত সন্তানকে জীবিত দেখেন। তার সঙ্গে কথোপকথনে লিপ্ত হন। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আমার সঙ্গে জ্বিনের কথোপকথনের অংশ এই কারণেই লেখা অবান্তর মনে করছি।

মূল গল্পে ফিরে যাই। তালা ভেঙে জিন ছালামকে নিয়ে গেছে, ঘটনাটি আমি এই কারণেই চাপা দিতে চাইলাম। ‘শ্রাবণ মেঘের দিনের’ অবস্থা যেন আবার না হয়। শুটিং বন্ধ করে যেন অঞ্চলছাড়া হতে না হয়।

কঠিন বিধিনিষেধ কাজ করল। আউটডোর শুটিং ঝামেলা ছাড়াই শেষ করে ঢাকায় ফিরলাম। মাথায় গল্প ঘুরপাক খেতে লাগল। প্রবল ডিলিউশনের শিকার এক মানুষের গল্প। যে ছালামের মতো জ্বিনকন্যার প্রেমে পড়ে এবং একসময় বিশ্বাস করে, জ্বিনকন্যার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তাদের একটি সন্তানও হয়। জ্বিনকন্যা একসময় সন্তান নিয়ে তার দেশে পালিয়ে যায়। মানুষটা তার সন্তানকে ফিরে পেতে ব্যস্ত। কী করে ফেরত পাবে তা সে জানে না। জ্বিনের দেশ কোথায়, কীভাবে সেখানে যাওয়া যায়, তাও তার কাছে অজানা।

জ্বিন-বিষয়ে আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে বলেই এ নিয়ে গল্প ফাঁদা বিপজ্জনক। এমন কিছু লিখে ফেললাম যা ধর্মগ্রন্থ স্বীকার করে না তাহলে মহাবিপদ। বায়তুল মোকাররম থেকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর মিছিল বের হতে পারে। রগকাটা স্কোয়াড বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে পথে নামতে পারে। আমাকে ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করা হতে পারে। অতীতে আমাকে একবার মুরতাদ ঘোষণা করা হয়েছে। বার বার মুরতাদ হওয়া কোনো কাজের কথা না। যা লিখব তা ভালোমতো জেনে লিখতে হবে।

জ্বিন-বিষয়ে কেউ আমাকে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারলেন না। যেসব তথ্য পেলাম সবই আমার জানা। যেমন, সন্ধ্যার পর জ্বিন মিষ্টির দোকানে গিয়ে মিষ্টি খায়। তারা যে নগরে বাস করে তার নাম কোহকাফ নগর।–এইসব।

জ্বিন-বিষয়ে একটি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেল। আরবি ভাষায় লেখা এই জ্বিন আকরগ্রন্থের লেখক আল্লামা বদরুদ্দীন শিবলী (রহঃ)। ৭২৯ হিজরিতে লেখা বইটির নাম আকাসুল মারজানি ফী আহকামিল জ্বান। এর উর্দু তর্জমা করেন পাকিস্তানের আলেম ইমাদুল্লাহ আনোয়ার। তিনি জ্বিন-বিশ্বকোষের নাম দেন তারিখে জিতে ওয়া শায়াত্বীন। এই বইটির একটি বাংলা তর্জমা আমার হাতে আছে। জ্বিন-বিষয়ক বইটিতে নবিজীর (দঃ) যেসব হাদিস ব্যবহার করা হয়েছে তার বেশিরভাগই আমার কাছে সহি হাদিস বলে মনে হয় নি। আলেমরা ভালো বলতে পারবেন।

জ্বিন ও মানুষের মধ্যে বিয়ে একদল আলেম বলছে বৈধ, একদল বলছে মকরুহ। আবার হানাফি মাজহাব বলছে অবৈধ, কারণ মানুষ ও জ্বিন সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতি।

জ্বিনের বেশ কিছু শ্রেণীবিভাগ আছে। একশ্রেণীর জ্বিন ইচ্ছামতো অন্য আকৃতি ধারণ করতে পারে।

একজন আলেম ইমাম সাআলাবী (রহঃ) কোরআন শরিফের নিচের আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, জ্বিন-মানুষের যৌনক্রিয়ায় সন্তান উৎপাদন সম্ভব।

আল্লাহ শয়তানকে বলছেন, তুই মানুষের সম্পদে ও সন্তানে শরিক হয়ে যা।

জটিল ধর্মতত্ত্বে আমি গেলাম না। জ্বিন-মানুষের বিয়ের অংশটি নিয়ে গল্প লেখা শুরু করলাম। গল্পের নাম দিলাম—

অংক শিক্ষক হাদিসউদ্দিন
এবং
জ্বিনকন্যা বিবি মোহতেরমা

একজন লেখকের মাথায় গল্প কীভাবে আসে পাঠক এখন নিশ্চয়ই খানিকটা ধারণা পাচ্ছেন। গল্পটির বীজ বোনা হয়েছিল নুহাশপল্লীতে শ্রাবণ মেঘের দিন ছবি তৈরির সময়। ছালাম সেই বীজে পানি দিল। বীজ থেকে অঙ্কুর বের করায় সাহায্য করল।

নুহাশপল্লীর একটি ঘটনা বলে এই লেখাটি শেষ করছি।

কাঠের বাড়ি ভেঙে নুহাশপল্লীতে পাকা দালান বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। সবার আগে ভাঙা হলো আমার ঘর। ফলস সিলিং ভাঙতেই দুটা প্রকাণ্ড দাঁড়াস সাপ নেমে এল। কার্বলিক অ্যাসিড অগ্রাহ্য করে এরা দিব্যি বাস করছিল। আমি মশারি খাটাই না। কে জানে রাতে কতবার এরা আমার গায়ের উপর দিয়ে গিয়েছে।

মাওলানা সাহেবের কথায়, জ্বিনেরা সাপের রূপ ধরতে পছন্দ করে। তাহলে এই দুটি সাপ কি জ্বিন? নুহাশপল্লীর লোকজন যখন সাপ দুটিকে পিটিয়ে মারল তখন কি তাদের উচিত ছিল না সর্পরূপ বাদ দিয়ে জ্বিনরূপে পালিয়ে যাওয়া?

No comments