শিক্ষামূলক গল্প: সম্পদের ভাগ

শিক্ষামূলক গল্প: সম্পদের ভাগ

এক গ্রামে এক লোক ছিল। তার ২ ছেলে। মারা যাবার আগে সে তার সম্পদ ২ ছেলেকে দিয়ে যান। তার সম্পদে তেমন কিছু ছিলনা। শুধু ১টা নারিকেল গাছ, ১টা গরু আর মাটির বাড়ি ছিল। সেই বাড়িতে শুধু ১টা খাট ছিল। লোকটার বড় ছেলেটা ছিল বেশ লোভী আর ছোট ছেলেটা ছিল খুব সরল প্রকৃতির। বড়ভাইটা লোভ করে মনে মনে ভাবলো, “বাবার এই সম্পদ শুধু আমিই ভোগ করবো, আর কাউকে ভোগ করতে দেবনা।”

বছরখানেক পর তাদের বাবা মারা গেলেন। ছোটভাই তার তাকে বলল

: আচ্ছা, বাবাতো মারা গেলেন। এখন কে আমাদেরকে তার সম্পদ সমান ভাগে ভাগ করে দেবে?

: কেন? আমিই ভাগ করবো।

: ভাই তুই পারবি?

: কেনো পারবোনা? অবশ্যই পারবো।

: তাহলে তুই ভাগ কর।

: ঠিক আছে। বাবার যে তালগাছটা আছে সেটার নিচের দিকের অংশ তুই নে আর উপরেরটা আমি নেই। গরুর মাথার দিকটা তুই মাথার দিকটা তুই নে আর বাবার খাটটা তো ছোট। আমি রাতের বেলায় নেই আর তুই দিনের বেলায় নিস। ঠিকাছে।

: আচ্ছা।

ছোট ভাইটা তার ভাইয়ের কুবুদ্ধি বুঝতে না পারলো না। তাই সে খুশি হয়ে তার কথা মেনে নিল।

কিছুদিন পর সে বুঝতে পারলো যে তার ভাই তাকে বোকা বানিয়েছে। তাকে গাছের নিচের অংশ দেয়া হয়েছে কারণ গাছের নিচে ফলমূল কিছুই হয়না বরং তাকে শুধু নিয়মিত পানি দিতে হয়। গরুর সামনের অংশ থেকে দুধ পাওয়া যায়না বরংগরুকে ঘাস খাওয়াতে হয়। আর দিনের বেলা বিছানায় শুয়ে কোনো ঘুম আসেনা। তাই তাকে দিনের বেলায় বিছানা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়ছে। অন্যদিকে তার বড়ভাই গাছের ফল, গরুর দুধ পাচ্ছে আর নিয়মিত ঘুমাচ্ছেও। এভাবে তো চলতে দেওয়া যায়না। তারতো অধিকার আছে। তাই সে তার ভাইকে জিজ্ঞেস করলো যে কেন সে তার সাথে এমন করলো। কিন্তু তার ভাই তাকে বলল,

: আমি ভাগ করেছিলাম এটা ঠিক। কিন্তু তুই সেদিন আমার সব কথায় রাজি হয়েছিলি। সেটা তোর দোষ। তুই রাজি না হলে এমন হতো না।

তার ছোটভাই তখন উপায় না দেখে। এক জ্ঞানী লোকের কাছে সব খুলে বলল। তখন সেই ব্যাক্তি তাকে বলল,

: এ তো ভারি অন্যায়। ওই সম্পদে তোমারো অধিকার আছে। ওকে সায়েস্তা না করে কোনো উপায় নেই। আমি তোমাকে যা যা করতে বলবো, তুমি ঠিক তাই করবে।

: ঠিকাছে।

: তোমাকে যেই গাছের গোড়া দিয়েছে সেই গাছের গোড়া কেটে বিক্রি করবে। আর সেই টাকা দিয়ে অনেকগুলো গাছের চারা কিনবে।

: ঠিকাছে।

: গরু জবাই করে সামনের যে অংশ তোমার সেটা বিক্রি করে বাছুর কিনবে। আর দিনের বেলায় বিছানারচাদর, বালিশ, কাথা সব ধুয়ে দিবে।

: ঠিকাছে।

তারপর সে তাই করলো।

পরদিন তার বড়ভাই দেখলো গাছ অর্ধেক কাটা, গরুও জবাই করা, আর বিছানাটাও ভেজা। তখন সে নিজের ভুল বুঝতে পারলো আর ভায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো। তখন তার ভাইয়ের দেখে গরুর মাংস বিক্রি করল। গাছের অর্ধেক বিক্রি করল। আর দুজনে কিছু টাকা দিয়ে নতুন ২টা খাট কিনল। এখন দুজনই গরুর খামার বানিয়েছে, নার্সারি বানিয়েছে আর সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করছে।।

No comments