ছাতা নিয়ে ছাতা-মাথা কাণ্ড – আদনান মুকিত
সমাজে দুই ধরনের মানুষ আছে। এক দল ছাতা ব্যবহার করে, আরেক দল করে না। আমি ছিলাম দ্বিতীয় দলের গর্বিত সদস্য। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি-অফিস–দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আমি কোনোদিন ছাতা কেনার কথা চিন্তাও করি নাই। জিনিসটা যে দরকারী, এটাই সেভাবে অনুভব করি নাই কখনো। কিন্তু আজকে এতই বৃষ্টি হইসে যে আমিও প্রথমবারের মতো একটা ছাতা কিনে ফেললাম৷
এমন না যে আমাদের বাসায় ছাতা নাই। আছে, আম্মার কাছে। কোনো এক রহস্যময় কারণে আমার চেয়েও ছাতাকে বেশি আগলে রাখে আম্মা (ওইটা অন্তত রোদ বৃষ্টিতে তাকে সাপোর্ট দেয়)। তার ধারণা আমি ছাতা হারায় ফেলব। ভ্রান্ত ধারণা। আমি কোনোদিন ছাতা হারাই নাই। ছাতার মতো ডান্ডিওয়ালা একটা জিনিস হারাব কেন? ভেঙে ফেলতে পারি বড়জোর। কিন্তু হারাই নাই। ডান্ডিটা হলেও ফেরত নিয়ে আসছি সব সময়। আসলে আম্মা ছাতা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বলেই আমার এই ছাতার বৈরাগ্য। মানুষই চিরদিন থাকে না, আর ছাতা! আম্মার অবশ্য অনেকগুলা ছাতা। একটা তো তার সাথেই থাকে সব সময়৷ ওইটা নিয়ে সে সুন্দর অফিসে চলে গেল। আমি বাসায় খুঁজে যে কয়টা ছাতা পেলাম, সবই ভাঙা। আমাকে তো ছাতা ধরতে দেয় না। তাহলে এগুলা কে ভাঙল? ফোন দিতেই আম্মা জানাল, ‘বাসায় কোনো ছাতা নাই। তোমার আজকে অফিসে যাওয়ার দরকার কী?’
অন্য সময় অফিসে না গেলে হাউকাউ করে, আজকে বলছে, অফিস বাদ দাও, তবু ছাতা দেব না। কী অদ্ভুত। আমি কিডন্যাপার ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আম্মার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতে হলে আমাকে কিডন্যাপ করে লাভ নাই। আপনারা ছাতা, বাটি, গ্লাস এসব নিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
খেলা দেখার সময়ই টের পেলাম আজকে মোটামুটি সারা বিশ্বেই বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টি সহজে থামবেও না। এদিকে বাসায়ও নাই ছাতা। কী আর করা, একটা পলিব্যাগ মাথায় দিয়ে চলে গেলাম আগোরায়, ছাতা কিনতে। গিয়ে দেখি ছাতা নাই। কী ছাতার সুপারশপ যে ছাতাই নাই! তবে আগোরার আপা বললেন একটু সামনে এগোলে আরএফএলের বেস্টবাইয়ে ছাতা পাব। পলিব্যাগ মাথায় পরে আবার বের হলাম। মজাই ব্যাপারটা। মনে হচ্ছিল আমার জ্বর আর আম্মা মাথায় পানি ঢালছে। ঢালা ঠিকমতো হচ্ছে না, মাঝে মাঝে পানি কানে ঢোকার চেষ্টা করছে।
ছাতার দাম সম্পর্কে আমার কোনো আইডিয়াই ছিল না।
আরএফএলের বেস্টবাই জানাল ছাতা আছে, দাম ৫৭০ টাকা। খুব হাই কোয়ালিটির ছাতা। ডিসকাউন্ট দিয়ে ৫১৮ টাকা আসবে। একটা ছাতার দাম ৫১৮ টাকা? দেশের অর্থনীতি কোনদিকে যাচ্ছে? রিজার্ভ এত কমে গেছে যে ছাতারও এত দাম? জিনিসটা অবশ্য বেশ অত্যাধুনিক। বাটন চাপলে খোলে, একই বাটন চাপলে বন্ধ হয়। এই ছাতা উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট খুব পছন্দ করবেন বলে আমার ধারণা। আমিও বেশ কয়েকবার বাটন চাপলাম। দোকানদার কেন যেন বিরক্ত হলো। আমিও আগেও খেয়াল করে দেখেছি, বাটন চাপ দিয়ে কারও সামনে ছাতা খুললে মানুষ বিরক্ত হয়। আশ্চর্য, ছাতা কীভাবে খুলব তাহলে?
আমি রাস্তায় বের হওয়া মাত্র দমকা হাওয়ায় হাই কোয়ালিটির ছাতা প্রায় উল্টে যায় যায় অবস্থা। ছাতার তখন ‘এ হাওয়া আমায় নেবে কতদূরে’ টাইপ অবস্থা। এর মধ্যেই দেখলাম কয়েকজনের ছাতা উল্টে গেছে। তখন মনে হলো আমারটার কোয়ালিটি একেবারে খারাপ না। অন্তত টাকার কথা ভেবেও ছাতা বোধহয় শেষমুহুর্তে ঘুরে দাঁড়ায়।
কোনোমতে ৫১৮ টাকার ছাতা নিয়ে অফিসে গেলাম। রাতে ফেরার সময় ছাতা হাতে রাস্তায় পানি আর মানুষের ছোটাছুটি দেখলাম কিছুক্ষণ। বাসায় ফেরার পর আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এতগুলা ছাতা ছিল বাসায়, একটাও নাই?’
‘না।’
‘বিদেশি ছাতাগুলা ছিল, ওগুলা কী করসো?’
(আম্মার সংগ্রহে বিভিন্ন দেশের ছাতা আছে)
‘ওগুলা আলমারিতে।’
‘তো বললেই হইত। হুদাই একটা ছাতা কিনলাম।’
‘ওগুলা এই বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাবে।’
হায়রে ছাতা! ভাগ্যিস আমি এত গুরুত্বপূর্ণ না।
Post a Comment