চিতাখোলার অদ্ভুত বিড়াল – ইমদাদুল হক মিলন
দাদা আপনি যাবেন কোথায়? চমকে মুখ ফিরিয়েছি। আরে, সঙ্গে যে একজন লোক আছে টেরই পাইনি। আমার পেছন পেছন আসছে। কথা শুনে মনে হচ্ছে ভদ্রলোক। ভাষা সুন্দর। গ্রামের সাধারণ মানুষ হলে এই ভাষায় কথা বলত না।
আকাশ ক্ষয় হয়ে আসা চাঁদ। পাতলা জ্যোৎস্না আছে চারদিকে। ফাগুন মাস। মধ্যরাতের মোলায়েম একখানা হাওয়া আছে। আমার দুপাশে ফসলের মাঠ। মাঝখান দিয়ে পায়েচলা পথ। বেশ পেছনে লঞ্চঘাট নির্জন হয়ে গেছে। আলোর চিহ্ন নেই। সামনে বহু দূরে গ্রামরেখা। পায়েচলা পথে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছি। তখনই পেছন থেকে ভদ্রলোকের ওই কথা।
বাজপুর যাব দাদা। আমাদের গ্রাম।
ভদ্রলোক দ্রুত হেঁটে আমার পাশে এলেন। আমার সঙ্গে পা চালিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, বাজপুর? আরে সে তো অনেক দূরের গ্রাম!
হ্যাঁ। এখান থেকে সাত-আট মাইল হবে।
যেতে যেতে রাত কাবার হয়ে যাবে। মানে ভোর রাত তো হবেই।
জানি। কী করব বলুন? মা অসুস্থ। মাকে দেখতে যাচ্ছি।
না না, মা বলে কথা। দেখতে তো যেতেই হবে। কিন্তু…
ভদ্রলোক দাদা দাদা করছেন শুনে ভেবেছিলাম বিক্রমপুর এলাকার রীতি অনুযায়ী তিনি দাদা ডাকছেন। এই অঞ্চলে হিন্দু-মুসলমান প্রত্যেকেই প্রত্যেককে দাদা ডাকে। এখন দেখছি ভদ্রলোক হিন্দু। তার পরনে খাটো ধুতি আর ফতুয়া।
আরেকটা কথাও ভেবেছিলাম। তিনিও হয়তো আমার মতো লঞ্চের যাত্রী। এখন দেখছি তা না। ভদ্রলোকের সঙ্গে ব্যাগ-সুটকেস কিছু নেই। ঝাড়া হাত-পা। আমার কাঁধে বড় একটা ব্যাগ।
ভদ্রলোক বললেন, হে হে, একটা কথা বলব দাদা?
নিশ্চয়। বলুন। কথা বলতে বলতে হাঁটলে রাস্তা তাড়াতাড়ি ফুরাবে। কিন্তু তার আগে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি।
আজ্ঞে, জিজ্ঞেস করুন?
আপনি যাবেন কোথায়? কোন গ্রামে?
ষোলঘর। আমি ষোলঘরের লোক।
এত রাতে এলেন কোত্থেকে?
আর বলবেন না দাদা। ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম রাজানগর গ্রামে। ওরা রাতটা থাকতে বলল। থাকতে চাইলাম না। মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে থাকতে সংকোচ হচ্ছিল। রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে হাঁটা দিয়েছি। রাতবিরাতে চলাফেরা করে আমি অভ্যস্ত। ডরভয় কম। কিন্তু আপনাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
কিসের চিন্তা?
না মানে ওই চিতাখোলাটার ওদিক দিয়ে যাবেন…
কিচ্ছু হবে না। আপনি যা বলতে চাইছেন ওসব ভয় আমার নেই।
খুব ভালো, খুব ভালো। তারপরও এত রাত করে এলেন কেন?
লঞ্চটা চরে আটকে গিয়েছিল। চার ঘণ্টা পর নামল। নয়তো বিকেলবেলাই এসে পড়তাম। কত আগে বাড়ি পৌঁছে যেতাম।
তা ঠিক। হে হে।
কী যেন একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাইলেন?
ও হ্যাঁ। আপনাদের ওই বাজপুর গ্রামের কথা। জিজ্ঞেস করতে চাইনি। বলতে চেয়েছি। কিছু মনে করবেন কি না…
না না বলুন। কী মনে করব? তবে অনুমান করছি আপনি কী বলবেন।
হে হে। আপনি বুদ্ধিমান লোক। অনুমান করার কথা।
শুনুন, আপনি যা বলতে চাইছেন আমিই তা বলে দিচ্ছি। আমাদের গ্রামটা একসময় ডাকাতের গ্রাম নামে পরিচিত ছিল।
হে হে। আজ্ঞে আমি ওকথাই বলতে চাইছিলাম।
এখন সেই দুর্নাম আর নেই।
জানি, জানি। ওই আপনাদের কালু ডাকাতটা ভাগ্যকূলে ডাকাতি করতে গিয়ে মারা গেল। সঙ্গে সঙ্গে সব শেষ। সর্দার না থাকলে দল থাকে নাকি? কালু সর্দার খতম, দলও খতম। হে হে। তারপরও দাদা বাজপুর বললেই বিক্রমপুরের লোকের মনে আসে ডাকাতের গ্রাম। আগে তো লোকে দিনদুপুরেও বাজপুরের রাস্তায় যেত না। ধারণা ছিল, কালু সর্দারের সাঙ্গপাঙ্গরা রামদা নিয়ে পথ আগলে দাঁড়াবে। সব ছিনিয়ে নেবে। হে হে।
সেসব বহু বছর আগের কথা। এখন বাজপুর ভদ্রলোকের গ্রাম। শিক্ষিত মানুষের গ্রাম।
তা তো বটেই, তা তো বটেই। হে হে।
বুঝলাম হে হে করাটা ভদ্রলোকের মুদ্রাদোষ। আমার অবশ্য খারাপ লাগছে না। একজন সঙ্গী পাওয়া গেছে, তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে এই নির্জন বিল পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে, এটাই বড় ব্যাপার। আমার এমনিতে সাহসের কমতি নেই। তারপরও মধ্যরাতে একা একা এ রকম একটা প্রান্তরের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া, ভয় কমবেশি লাগবেই। তা ছাড়া পথে পড়বে ওই চিতাখোলা। খালের ধারে শ্মশান। কত গল্পকাহিনি ওই চিতাখোলা নিয়ে। অশরীরী কারা কারা নাকি ঘুরে বেড়ায়। নানান রূপে দেখা দেয়।
ভূতের ভয় আমার নেই। তারপরও এসব শুনলে গা ছমছমে একটা অনুভূতি হয়। লঞ্চঘাটে নামার পর দোকানিরা কেউ কেউ বলেছিল এত রাতে এতটা দূরের পথ না যাওয়াই ভালো। তাও একা একা। চিতাখোলাটা পড়বে রাস্তায়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
লঞ্চে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। আলমপুরেই বাড়ি। লঞ্চঘাট থেকে মিনিট দশেকের পথ। অনেক অনুরোধ করলেন, আমার বাড়িতে রাতটা থেকে যান ভাই। এত রাতে একা যাওয়ার দরকার নেই। কাল সকালে চলে যাবেন।
তাঁর কথা রাখা সম্ভব হয়নি। মা খুবই অসুস্থ। যত তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে গিয়ে পৌঁছাতে পারি।
লঞ্চঘাট ছাড়িয়ে বিলের দিকে আসতেই, বিশাল খোলা প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে একবার মনে হলো ভদ্রলোকের কথা শুনলেই পারতাম। কেমন যেন একটু গা কাঁটা দিয়ে উঠেছিল। একা একা হাঁটার সময়ও ভয় একটু একটু হচ্ছিল।
এখন সেসবের কিছুই নেই। সঙ্গে একজন লোক আছে।
ব্যাগ এক কাঁধ থেকে আরেক কাঁধে এনে বললাম, দাদা, আপনার নামটা জানা হলো না। ষোলঘরের লোক তা বললেন, নামটা বললেন না।
হে হে, আমার নাম আজ্ঞে গুরুদয়াল ভট্টাচার্য। সবাই দয়াল মাস্টার বলে ডাকত।
আপনি শিক্ষক?
আজ্ঞে। ষোলঘর হাইস্কুলের অঙ্কের টিচার ছিলাম। হে হে। লোকে আমাকে বলত অঙ্কের জাহাজ। আমি পাটিগণিত রচনা করলে নাকি যাদবের পাটিগণিত আমার সামনে দাঁড়াতে পারত না। হে হে। অঙ্কের মাস্টার হিসেবে এমনই ছিল আমার সুনাম।
‘ছিল’ কেন? এখন আপনি আর মাস্টারি করেন না?
না দাদা। অনেক দিন হলো মাস্টারি ছেড়ে দিয়েছি। অঙ্কটা এখন আর মাথায় খেলে না। হে হে। ছেলেপুলেরাই বুড়ো হয়ে গেছে। নাতি-নাতনিরা মা-বাবা হয়েছে। এক নাতনি শাশুড়িও হয়ে গেছে। আমি করি না কিছুই। এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াই। আজ এখানে যাচ্ছি, কাল ওখানে যাচ্ছি। এই যেমন আজ ফিরছি…হে হে আগেই আপনাকে সে কথা বলেছি।
হ্যাঁ, ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন।
আজ্ঞে। কিন্তু দাদা, আপনার নাম-পরিচয় তো কিছুই জানা হলো না।
আমার নাম মাসুদ হাসান। গ্রামের নাম তো বললামই। থাকি ঢাকায়। মমিন মোটর কোম্পানিতে চাকরি করি। এখনো বিয়েথা করিনি। বাবা মারা গেছেন। মা আর ছোট একটা বোন আছে। বোনের বিয়ে দিয়ে তবে নিজের কথা ভাবব।
হে হে। খুব ভালো, খুব ভালো।
একটু থেমে দয়ালবাবু বললেন, একটা কথা বলব দাদা?
বলুন বলুন। বারবার অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই। এ রকম রাতদুপুরে দুজন মানুষ আমরা নির্জন বিলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, কথা আর গল্পগুজবের মধ্যে থাকলে সময়টা কেটে যাবে।
হে হে… ঠিক বলেছেন। এক কাজে দুকাজ হবে। কথাবার্তা গল্পগুজবও হলো, পথও ফুরাল। চিতাখোলার ওখানটায় গিয়ে দুজন চলে যাব দুই পথে। আমি উত্তরে, আপনি দক্ষিণে।
ঠিক তাই।
আমি বলছিলাম কি দাদা, এই যে আপনি একা একা এত রাতে এই পথে বাড়ি যাচ্ছেন, লঞ্চঘাটের কেউ কিছু বলেনি আপনাকে?
দয়ালবাবুর কথার অর্থ বুঝেও জানতে চাইলাম, কী বলবে?
না মানে ওই চিতাখোলাটা…
বলেছে কেউ কেউ। তা ছাড়া আমি নিজেও কিছুটা জানি।
কী জানেন?
গ্রাম এলাকায় চিতাখোলা বা নির্জন এলাকার কোনো কোনো বট, তেঁতুল বা গাবগাছ আর বাঁশঝাড় নিয়ে যেসব গল্পকাহিনি প্রচলিত থাকে, এই চিতাখোলা নিয়ে তেমন অনেক কাহিনি প্রচলিত।
দু-একটা বলুন না।
আমি একটু হাসলাম। তার আগে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
দয়ালবাবু হাসলেন। আমাকেও যে আপনার মতো করেই বলতে হয়।
বলতে হয় বলুন।
অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই।
ঠিক আছে। বলছিলাম কী, আমি এই চিতাখোলা নিয়ে যা শুনেছি, ওসব আপনিও নিশ্চয় শুনেছেন।
আজ্ঞে তা শুনেছি।
তাহলে আপনি যে এত রাতে একা একা চলেছিলেন, আপনার ভয় করছিল না?
আমি একা একা চলছিলাম না। হে হে। আমি দূর থেকে আপনাকে দেখেছিলাম এই পথে রওনা দিয়েছেন। তখন আপনার পেছন পেছন এলাম। তবে আমি এদিকটায় প্রায়ই রাতদুপুরে…
কথা শেষ করলেন না দয়ালবাবু।
রাতদুপুরে কী?
থাক সে কথা?
কেন থাকবে? বলুন না!
এই আরকি, মাঝে মাঝে রাতদুপুরে এদিকটায় আমি আসি।
কেন?
এমনি।
এমনি এমনি রাতদুপুরে এদিকটায় কেউ আসবে কেন?
হে হে… একটু মিথ্যা বলেছি আজ্ঞে। আসি একটা কাজে।
কী কাজ?
ওই একজনকে খুঁজতে আসি আরকি।
বলেন কী? রাতদুপুরে এ রকম খাঁ খাঁ নির্জন বিলে কাকে খুঁজতে আসেন আপনি?
আছে একজন।
সে এ রকম জায়গায় কী করে রাতে? দিনে থাকে কোথায়?
দিনে তার দেখা পাওয়া যায় না। হে হে। এ রকম নিশিরাতে কখনো কখনো পাওয়া যায়। আমি মাত্র একবার পেয়েছিলাম…
অদ্ভুত ব্যাপার।
হে হে। ব্যাপারটা অদ্ভুতই। তবে সে আসলে মানুষ না।
আমি চমকালাম। মানুষ না মানে?
একটা জীব আরকি! হে হে।
কী ধরনের জীব, যাকে আপনি এ রকম একটা জায়গায় রাতদুপুরে খুঁজতে আসেন?
আরেকটা সত্য কথা বলব?
তার মানে আপনি এতক্ষণ ধরে সবই মিথ্যা বলছিলেন।
আজ্ঞে না। সব মিথ্যা বলিনি। হে হে। নামটা সত্য বলেছি, গ্রামের নাম সত্য বলেছি। অঙ্কের টিচারটা সত্য বলেছি।
তাহলে মিথ্যা কোনটা?
ওই ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে আসা ইত্যাদি। হে হে…
অর্থাৎ আজও আপনি সেই জীবটাকে খুঁজতে এসেছেন?
আজ্ঞে সঠিক।
এবার বলুন কী জীব সেটা?
আজ্ঞে একখানা বিড়াল। ভালো বাংলায় যাকে বলে মার্জার।
এ রকম নির্জন বিলে রাতদুপুরে আপনি আসেন একটা বিড়াল খুঁজতে? আশ্চর্য ব্যাপার।
আশ্চর্য ব্যাপার তো বটেই। কী করব বলুন? তাকে যে বড় দেখতে ইচ্ছা করে। সে যে এ রকম রাতদুপুর ছাড়া বেরই হয় না। হে হে। বহু বছর আগে একবার…। থাক ওসব কথা। চিতাখোলা নিয়ে কী কী শুনেছেন বলুন। আপনি বলার পর আমি বলব।
খালের ধারে চিতাখোলা বলে শবদেহ পোড়ানো হয় খালের পাড়ে নিয়ে। দেশভাগের পর সচ্ছল হিন্দুরা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। গরিব মধ্যবিত্ত আছে কিছু এলাকার গ্রামগুলোতে। মাসে-দুমাসে এক-দুজন মারা গেলে দাহ করতে নিয়ে আসে। জায়গাটা নির্জন পড়ে থাকে। গাছপালা আছে অনেক। বাঁশঝাড়, তেঁতুলগাছ, গাবগাছ। হিজলের বন আছে একটা। বেতবন আর বরুনগাছ আছে। এই এলাকায় বলে ‘বউন্নাগাছ’। কদম, নিমের গাছও আছে। কোনো কোনো জ্যোৎস্নারাতে নাকি দেখা যায় খালের ধারে দাঁড়িয়ে আছে একজন। তার মাথা নেই। শরীরভর্তি শুধু চোখ। তাকে নাকি দিনেও, মানে নির্জন দুপুরে বা সন্ধ্যার মুখে মুখেও দেখা যায়।
হে হে, এটা আমিও শুনেছি। আর?
সাদা থান পরা কে নাকি পা ঝুলিয়ে বসে থাকে তেঁতুলডালে। তাকেও দেখেছে অনেকে। মানে পথিকেরা। এপথে রাতবিরাতে যারা চলাফেরা করে। আমাদের গ্রামের জয়নাল দেখেছিল একটা ঘোড়া। চিতাখোলার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। জয়নালকে দেখে তার পিছু পিছু হাঁটতে লাগল। কিছুক্ষণ পর জয়নাল নাকি দেখে কোথায় ঘোড়া, তার আগে আগে হাঁটছে একজন। মাথাটা গিয়ে ঠেকেছে প্রায় আকাশে। বিশাল পা ফেলে নদীর মতো চওড়া খালটা পেরিয়ে গেল, যেন সরু নালা টপকে গেল কোনো শিশু। এসব আরকি!
হে হে। বুঝেছি বুঝেছি। গল্পগুলো দাদা এ রকমই। এসব গল্প এ রকমই হয়।
আপনি কী কী শুনেছেন বলুন।
এসবই শুনেছি। ওই ঘোড়া দেখেছি, মুণ্ডু ছাড়াটা, শরীরভর্তি চোখ, ওটাকে দেখেছি।
বলেন কী? আপনি নিজ চোখে দেখেছেন?
দেখেছি, হে হে, নিজ চোখেই দেখেছি আজ্ঞে। এ রকম রাতদুপুরেই দেখেছি। বিড়াল খুঁজতে আসি। তাদের সঙ্গে দেখাটেখা হয়।
আশ্চর্য ব্যাপার! বলছেন এমনভাবে যেন তারা আপনার আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব। নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ হয়।
বলতে গেলে তেমনই। রাতবিরাতে চলাফেরা করা মানুষ আমি। বুঝলেন না? হে হে। আর ওই যে যার কথা বললেন, আকাশে গিয়ে ঠেকেছে মাথা, খাল পার হয়ে যেন সরু নালা পার হচ্ছে শিশু, তাকেও দেখেছি। চিতাখোলার তেঁতুলগাছে এক পা, আরেক পা আমাদের ষোলঘরের বটগাছটার ওপর। ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সে খুব ভালোবাসে। হে হে। বাঁশঝাড়টার কথা তো বললামই না। ওটা একটা হাটবাড়ি। হাটবাড়ি বোঝেন দাদা?
বুঝি। যে বাড়িতে প্রচুর ঘর, প্রচুর লোকের বাস।
হে হে। সঠিক। ওই বাঁশবনে ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি ওসব নিত্যরাতের কারবার। বেশি লোকজন এক বাড়িতে থাকলে যেমন হয়, একদমই তেমন। বুঝলেন না দাদা? হে হে। ওই আকাশমাথাটা হচ্ছে মোড়ল। সে গিয়ে ঝগড়াঝাঁটি-চেঁচামেচি থামায়। এসব আমার নিজ চোখে দেখা। হে হে। দেড়-দু শ বছর ধরে এই চিতাখোলায় দাহর কাজ চলছে। তাদের কেউ কেউ জায়গাটা ছেড়ে যায়নি। এখানেই থান গেড়েছে। ভালো-মন্দ সব ধরনেরই আছে। উঁচুজাত নিচুজাত আছে। ধনী-গরিব আছে। নাপিত-কামার আছে। নারী-পুরুষ, বুড়ো-বুড়ি, শিশু-কিশোর অর্থাৎ সর্বশ্রেণির। বুঝলেন না? আমি চিনি প্রায় সবাইকেই। নিয়মিত আসা-যাওয়া করি তো? পরিচয় আছে সবার সঙ্গেই।
এ ধরনের কথা পাশের লোকটি যদি এ রকম রাতদুপুরে, এ রকম পরিবেশে বলে তাহলে মনের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত? ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ার কথা। যে বলছে তাকেই চিতাখোলার বাসিন্দাদের একজন ভেবে হার্টফেল করার কথা। আমার তেমন কিছুই হচ্ছে না। বরং হাসি পাচ্ছে। দয়ালবাবু নিশ্চয় আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এভাবে বলছেন। আমার সাহসের পরীক্ষা নিচ্ছেন।
দয়ালবাবু।
আজ্ঞে।
আপনি কি রোজ রাতেই বিড়াল খুঁজতে আসেন?
রোজ রাতে পারি না। হে হে। বয়স হয়েছে। এ রকম হালকা জ্যোৎস্না রাতে আসি। পূর্ণিমা রাতে বা তার আশপাশের রাতগুলোতেও আসার চেষ্টা করি। চোখের জ্যোতি কমে এসেছে। হে হে। এ জন্য অন্ধকার রাতে আসি না। তবে অন্ধকার রাতে আগে আসতাম। অন্ধকার যত গভীরই হোক, তাকে দেখলেই আমি চিনতে পারব। হে হে। সেও চিনতে পারবে আমাকে। বহু বছর আগে একবার, মাত্র একবার দেখা হয়েছিল। সেটা অবশ্য অন্ধকার রাত ছিল না। এ রকম ম্যাটমেটে জ্যোৎস্না রাত ছিল। বোধ হয় এ রকম রাতে আসতে সে পছন্দ করে। এ জন্য এমন রাতে আপনি দাদা বলতে পারেন আমি রোজই আসি। হে হে। আমি যে তারে বড় ভালোবাসি। সেও আমাকে ভালোবাসত। তবে আমি যতটা বাসি বোধ হয় ততটা সে আমাকে ভালোবাসে না। তাহলে এত এত বছর আমাকে দেখা না দিয়ে পারত না।
এই প্রথম আমার মনে হলো আরে, দয়ালবাবু তো সুস্থ মানুষ না। পাগল, পুরো পাগল। বাজারঘাটে পড়ে থাকা নোংরা টাইপ পাগল না। অন্য রকম। ভদ্রপাগল। লেখাপড়া জানা লোকের মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেলে যা হয়, দয়ালবাবু তাই। আশ্চর্য ব্যাপার! এটা বুঝতে আমার এত সময় লাগল কেন? যখনই তিনি বিড়াল খুঁজতে এ রকম রাতদুপুরে এদিকটায় আসার কথা বললেন তখনই আমার বোঝা উচিত ছিল তিনি সুস্থ মানুষ না। পাগল। আর যখন চিতাখোলার বাসিন্দাদের নিয়ে কথা বললেন, তাদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ইত্যাদি ইত্যাদি বললেন তখন তো আমার শতভাগ নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল যে এসব কোনো স্বাভাবিক মানুষের কথা না। পাগল ছাড়া কেউ এসব বলে না। এসব আসলে পাগলের প্রলাপ।
তারপরও দয়ালবাবুকে আমার খারাপ লাগছে না। অতি মিষ্টভাষী গল্পবাজ লোক। হোক পাগল। আমার তো কোনো ক্ষতি করছে না। বরং উপকারই করছে। এ রকম রাতে, এই নির্জন বিল প্রান্তর পেরিয়ে যেতে সঙ্গ দিচ্ছে। পাগল মানুষ। আমার পেছন পেছন না এলেই বা কী হতো? পাগলের তো আর ভূতের ভয় থাকে না। যেকোনো দিকে চলে গেলেই পারতেন? কথাবার্তা শুনে যা এতক্ষণে বুঝেছি তা হলো ওই যে কোনো কোনো পাগল থাকে না, বিশেষ একটা বিষয়ের প্রতি কাতর, দয়ালবাবু তেমন পাগল। তার বিষয় হচ্ছে একটা বিড়াল। এই বিলে তিনি সেই বিড়াল খুঁজতে আসেন। দুষ্টুলোকে তাঁকে হয়তো বিক্রমপুরের ভাষায় বলে বা নাম দিয়েছে ‘বিলাই পাগলা’।
চিতাখোলার অদ্ভুত বিড়াল
অলংকরণ: শিখা
বাহ্, নামটা তো সুন্দর। ‘বিলাই পাগল’।
দয়ালবাবু।
আজ্ঞে বলুন দাদা। হে হে।
সবই বললেন শুধু একটা ঘটনাই বলছেন না।
ওই আমার বিড়ালটার ঘটনা?
হ্যাঁ।
আজ্ঞে ওটাই আসল ঘটনা। হে হে। ওটাই বলা দরকার। এই ধরুন চিতাখোলার বাসিন্দাদের নিয়ে সবই প্রায় বলে ফেলেছি। কারা কারা থাকে, আমার সঙ্গে তাদের চেনাপরিচয়, দেখাসাক্ষাৎ সবই বলেছি। ওখানে যে আমার বিড়ালটাও থাকে…
আপনার বিড়ালটাও কি ওখানকারই বাসিন্দা?
আজ্ঞে ওখানকারই।
বলুন না ঘটনাটা, শুনি।
বলছি বলছি। এখনই বলার সময়। ওই যে দেখুন, ওই যে চিতাখোলার গাছপালা আবছা মতন দেখা যাচ্ছে। খালটা এখন আর খাল নেই। শুকিয়ে প্রায় মরে গেছে। গ্রীষ্মে জল বলতে গেলে থাকেই না। বর্ষায় জল কিছুটা হয়। নৌকা নিয়ে মাঝিমাল্লারা যাতায়াত করে। হে হে। তবে একা না। তিন-চার নৌকা একসঙ্গে হয়ে তবে যাবে। হে হে। বুঝলেন দাদা? ওই আরকি, চিতাখোলার বাসিন্দারা ভয়টয় দেখায়, বিরক্ত করে। ওদের যা কাজ আরকি!
বুঝলাম। বিড়ালের গল্পটা বলুন।
দয়ালবাবু একটু মাইন্ড করলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, গল্প বলবেন না দাদা। আমার জীবনের ঘটনা। সত্য ঘটনা। যার জন্য আমি এমন কাতর, তার ব্যাপারটাকে আপনি গল্প বলবেন না দয়া করে।
সরি। আই অ্যাম রিয়েলি সরি। আপনি বলুন।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। হে হে। বিড়ালটা দাদা পেয়েছিলাম চিতাখোলার ওদিক দিয়ে ফেরার পথে। ছোট্ট সাদা একটা বিড়ালছানা। সে দাদা বহু বহু বছর আগের কথা। তার সঙ্গে তো আমার শেষ দেখাই হলো বিয়াল্লিশ বছর আগে।
এই ধরনের গল্পে মাঝে মাঝে হু হা বলতে হয়। একধরনের সায় দেওয়া আরকি! তাতে গল্প বলিয়ের সুবিধা হয়। আমি সেই কাজটা শুরু করলাম।
মানে চিতাখোলার ওদিক থেকে আসার পথে বিড়ালছানাটা আপনি পেলেন?
আজ্ঞে?
কত বছর হবে আনুমানিক?
৪২+১১+১ = ৫৪ বছর আজ্ঞে। হে হে।
হাট সেরে ফিরছিলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বুঝলেন দাদা। মধ্যবয়স। সেদিন আবার পূর্ণিমা। সন্ধ্যা হয়ে সারেনি, পুব আকাশে চাঁদ উঠে গেছে। আমি হনহন করে হাঁটছি। এ সময় দেখি পেছনে কাতর মিউমিউ শব্দ করে একটা বিড়ালছানা আসছে। চাঁদের আলোয় ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে ছানাটি। হে হে। ধবধবে সাদা। শিউলি ফুলের মতো, গন্ধরাজ ফুলের মতো। আরে তুই এলি কোত্থেকে? কোথায় যাবি রে, বাছা? দয়াল ভটচার্যিকে চিনলি কীভাবে? বিড়াল তো আর কথা বলতে পারে না। মিউ মিউ করে আর হাঁটে। ভারি মায়া লাগল। কাঁধে হাটের চাঙারি। সংসারের জিনিসপত্র। এই পেঁয়াজ রসুন আলু ইত্যাদি। সেই চাঙারিতে বসিয়ে বাড়ি নিয়ে এলাম। আমার সংসারের বাসিন্দা হয়ে গেল সে। এত সুন্দর বিড়াল। ওই যে বললাম শিউলি বা গন্ধরাজের মতো সাদা। চোখ দুটো সবুজ মার্বেলের মতো। বাড়ির সবাই তাকে খুব ভালোবেসে ফেলল। আমার মা বেঁচে আছেন, তিনি। ভাইবোনেরা। ছেলেমেয়েরা। স্ত্রী। আমাদের ছিল একান্নবর্তী পরিবার। সবাই বিড়ালটাকে ভালোবাসে। আর বিড়ালটা যেন ভালোবাসে শুধু আমাকে। আমি যতক্ষণ বাড়িতে সে আছে আমার পায়ে পায়ে। রাতে ঘুমায় আমার পাশে। আমি বাইরে যাওয়ার সময় করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে। ফিরে আসার পর ছুটে এসে পায়ে মুখ ঘষে। অদ্ভুত এক সম্পর্ক। আমি একসময় খেয়াল করলাম আমার ছেলেমেয়েদের চেয়েও বিড়ালটার জন্য যেন আমার বেশি মায়া। বেশি ভালোবাসা। আত্মীয়বাড়ি গিয়ে দু-চার দিন থাকলে বিড়ালটার জন্য অস্থির হয়ে যাই। পাগল পাগল লাগে। খুব ইচ্ছা করে যেখানে যাই ওকেও নিয়ে যাই সঙ্গে। ওকে ছেড়ে থাকতেই পারি না। ওরও অবস্থা আমার মতোই। আমি বাড়িতে না থাকলে কিছুই মুখে দেয় না। চুপচাপ বসে থাকে একটা জায়গায়। হাঁটাচলা পর্যন্ত করে না। আমি ফিরে এলেই যেন প্রাণ ফিরে পায়। আর তত দিনে বড় হয়ে গেছে সে। বেশ ভালো স্বাস্থ্য। দেখতে ভারি সুন্দর। দুধ ছাড়া কিছুই খায় না। হেঁজিপেঁজি বিড়ালদের মতো মাছের কাঁটা ইঁদুর কাঁচা মাছ ওসব মুখেই দেয় না। জাতটাই ভিন্ন। ভাবটাই ভিন্ন। একেবারে রাজকীয় বিড়াল…
দয়ালবাবু একটু থামলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমি তার নাম রেখেছিলাম সোনামানিক। নাম ধরে ডাক দিলেই আদুরে শিশুর মতো ঝাঁপ দিয়ে কোলে আসত। আমিও বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করার ভঙ্গিতে বলতাম, ওরে আমার সোনা রে, আমার মানিক রে…
এই বিড়াল একদিন উধাও হয়ে গেল।
গল্পের রেশ ধরে রাখার জন্য বললাম, উধাও হয়ে গেল?
আজ্ঞে উধাও হয়ে গেল।
বলেন কী?
আজ্ঞে। দিনদুপুরে উধাও হয়ে গেল। হে হে। সকালবেলা আমি যখন ভাত খাচ্ছি তখন সে আমার পাশে বসে চুকচুক করে তার বাটিতে দেওয়া দুধ খাচ্ছিল। আমি সকালবেলা ভাত খেয়ে স্কুলে যাই। বিকেলবেলা ফিরে এসে সামান্য জলখাবার খাই। রাতে আবার ভাত। সোনামানিকের ওই তিন বেলাই দুধ। বাকি সময়টা সে শুয়েবসে থাকে। এদিক-ওদিক নিঃশব্দে হাঁটাচলা করে। শীতকালে বারান্দার রোদে শুয়ে থাকে। আশ্চর্য ব্যাপার হলো আমাদের পাড়ায় অনেক বাড়িতেই বিড়াল আছে। হুলো বিড়াল, মেনি বিড়াল। সেগুলো এবাড়ি ওবাড়ি যায়। আমাদের বাড়িতেও আগে আসত। সোনামানিক বাড়িতে আসার পর, শুরু থেকেই, ওই ওইটুকু পুঁচকে একটা বিড়ালছানা, তাকে এমন ভয় পেতে লাগল পাড়ার ধাড়ি বিড়ালগুলো! প্রথম প্রথম দু-চার দিন আসছিল আমাদের বাড়িতে। ওইটুকু সোনামানিক কিছুই করত না, শুধু চোখ তুলে তাকাত তাদের দিকে, সঙ্গে সঙ্গে যেন যমদূত তাকিয়েছে তাদের দিকে এমন ভঙ্গিতে দৌড়ে পালাত। কেন এইটুকু একটা বিড়ালকে এত ভয় পায় ধাড়ি বিড়ালগুলো আমরা বুঝতেই পারতাম না। মজা পেতাম খুব।
সোনামানিক বড় হওয়ার পর ঘটল আরেক ঘটনা। আমাদের বাড়িতে অবশ্য গরু-ছাগল ছিল না। হাঁস-মুরগি ছিল। কুকুরও ছিল না। পাড়ায় কুকুর ছিল অনেক। একটা সময়ে দেখি কুকুরগুলোও যমের মতো ভয় পায় সোনামানিককে। কাছাকাছি কোনো কুকুর এলেই সে শুধু একবার চোখ তুলে তাকায় আর কুকুরেরা জান নিয়ে দৌড় দেয়। কেঁউ কেঁউ করে ভয়ার্ত চিৎকার ছাড়ে। ধাড়ি বিড়ালগুলোও পালানোর সময় ত্রাহি ডাক ছাড়ে।
ব্যাপারটা কী?
আজ্ঞে প্রথম প্রথম সেটা বুঝতে পারিনি। হে হে।
কবে বুঝলেন?
বুঝলাম আজ্ঞে হঠাৎ একদিন। বারান্দায় বসে আছি। ছুটির দিন। হাতে একটা বই। বারান্দার চেয়ারটায় বসে বই পড়তে বড় ভালোবাসতাম। বই পড়ছি। সোনামানিক আছে। যথারীতি বসে আছে পায়ের কাছে। এ সময় আনমনা ভঙ্গিতে একটা কুকুর ঢুকেছে বাড়িতে। আমি চোখ তুলে কুকুরটার দিকে তাকিয়েছি। সোনামানিককে সে তখনো দেখতে পায়নি। হঠাৎ দেখি কুকুর এমন একটা আর্তচিৎকার দিল, যেন কেউ তাকে লাঠি দিয়ে খুব জোরে মেরেছে। কুকুরটা প্রায় বসে পড়েছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছি সোনামানিকের দিকে। তাকিয়ে মুহূর্তের জন্য দেখতে পেলাম তার চোখ থেকে লাল একটা আলোকরশ্মি যেন কুকুরটার গায়ে গিয়ে পড়েছে। সেকেন্ডেরও কম সময় হবে বোধ হয়। কুকুরটা আর্তচিৎকার করতে করতেই ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে দৌড়ে পালিয়ে গেল।
তার মানে আপনার ওই সোনামানিকের চোখে কিছু একটা ছিল?
আজ্ঞে ছিল।
কী সেটা বলুন তো?
আজ্ঞে অদ্ভুত একটা আলো ছিল। বিড়ালটার চোখ সবুজ কিন্তু চোখ থেকে ঠিকরে বেরোনো আলোটা লাল। টকটকে লাল।
আশ্চর্য ব্যাপার।
সত্যি আশ্চর্য ব্যাপার। সেদিন সেকেন্ডের জন্য আলোটা আমি দেখলাম। কুকুরটার গায়ে গিয়ে পড়েছিল। তাতেই কুকুরটার ওই দশা। আমি বিড়ালটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম। ঘটনা কী? জীবটা এমন কেন? এ কোন জগতের বিড়াল? এত মায়াবী মোলায়েম স্বভাবের বিড়াল। চোখে তার ওই আলো আসে কোত্থেকে, যে আলোয় মরতে বসে অন্য বিড়াল-কুকুর? ওই আলোর ভয়ে আমাদের বাড়ির ধারকাছেও আর আসে না?
দয়ালবাবুর গল্পে আমি একেবারে মগ্ন হয়ে আছি। লোকটা যে পুরোই পাগল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ভালো জাতের পাগল। জমিয়ে গল্প বলে যাচ্ছেন। এমন গল্প, না শুনে উপায় নেই। বয়স্ক মানুষ, তবু তাঁর হাঁটাচলা আমার মতোই। অতি দ্রুত হাঁটছেন। যে তালে হাঁটছেন সেই তালেই গল্প বলে যাচ্ছেন। আমার সময়টা অসাধারণ কাটছে। পাগল হোক আর যা-ই হোক সঙ্গী হিসেবে তাঁর তুলনা হয় না। গল্পবাজ মানুষ সঙ্গী হিসেবে কখনো কখনো খুবই বিরক্তিকর হয়। দয়ালবাবু তেমন না। দিনের বেলা হলে এসব গল্প হয়তো আমি পাত্তা দিতাম না বা শুনতাম না। এখন শুনতে ভালো লাগছে। সময় কাটছে। রাস্তা ফুরাচ্ছে। ভালোই তো।
দয়ালবাবু বললেন, কয়েকটা দিন খুব ভাবলাম বিড়ালটা নিয়ে। ওর চোখের ব্যাপারটা কাউকে বলা দরকার। কাকে বলব? আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছেন আমার মা। মায়ের তখন বয়স নব্বইয়ের ওপর…
তাহলে আপনার বয়স?
আজ্ঞে আমার তখনকার বয়সের কথা বলছেন?
হ্যাঁ।
প্রসঙ্গটা থাক। হে হে। বিদায় নেওয়ার সময় বলে যাব।
ঠিক আছে, ঠিক আছে।
মাকে একদিন বললাম কথাটা। স্কুলে যাওয়ার আগে মাকে বলে বাড়ি থেকে বেরোতাম। স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের বলি না বলি, মাকে বলবই। বাবা বেঁচে থাকলে তাঁকে বলতাম না। মাকেই বলতাম। বিড়ালটার ঘটনা শুনে মা একেবারে কেঁপে উঠলেন। সর্বনাশ! এ তো বিড়াল না! এ তো অন্য জিনিস! চিতাখোলার কাছে তুই ওটাকে পেয়েছিলি না? এ অন্য জিনিস। একে বাড়ি থেকে বিদায় কর…
কিন্তু আপনি তো বিড়ালটাকে খুব ভালোবাসেন?
আজ্ঞে তা তো বটেই। আমার সন্তানদের মতোই ভালোবাসি।
আপনার মা তা জানতেন না?
হে হে, জানবেন না কেন? বাড়ির সবাই জানে। মাও জানেন।
তাহলে?
তিনি তাঁর মতামত দিলেন। কিন্তু আমি কি আর আমার সোনামানিককে ফেলব? মার কথা শুনে রাখলাম। চলে গেলাম স্কুলে। ফিরে এসে দেখি বিড়াল উধাও। উধাও তো উধাও। কোথাও নেই। পুরো পাড়া তন্নতন্ন করে খুঁজলাম। নেই। কোথাও নেই। পুরো গ্রাম চষে ফেললাম। কোথাও সোনামানিক নেই। তার মানে মায়ের কথা কি সে শুনতে পেয়েছে? সে কথায় অভিমান করে কি চলে গেল কোথাও? আর কোনো দিন ফিরে আসবে না?
আমার বুকটা একদম ভেঙে গেল দাদা। আমি পাগল হয়ে গেলাম। একমাত্র সন্তান মারা গেলে যেমন অনুভূতি হয়, আমার অনুভূতি তেমন। খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিলাম। স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিলাম। এদিক-ওদিক ঘুরি আর কাঁদি আর সোনামানিককে ডাকি। ওরে আমার সোনা রে, ওরে আমার মানিক রে, আমায় ছেড়ে তুই কোথায় চলে গেলি রে…
আমি আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। ফিক করে হেসে ফেললাম। কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা?
আমার হাসির শব্দটা শুনলেন দয়ালবাবু। বোধ হয় একটু মাইন্ড করলেন।
হাসুন দাদা, হাসুন। তখনো আমার ওই অবস্থা দেখে সবাই হাসত। পাগল বলত। সাধারণ মানুষের কাছে এসব তো হাসিরই কথা। পাগলের প্রলাপ মনে হবে। হাসুন, যত ইচ্ছা হাসুন। কোনো অসুবিধা নাই। তবে ঘটনাটা শুনুন।
বলুন বলুন। শুনছি।
এ সময় একদিন একটা খবর পেলাম। আমাদের গ্রামের দিনমজুর নিখিল জমি চাষ করার কাজ করছিল চিতাখোলার ওই দিকে। সে নাকি ওই যেদিন আমার বিড়ালটা উধাও হয়েছে সেদিন দেখেছে একটা বড় সাইজের সাদা বিড়াল আমাদের গ্রাম থেকে তিরের বেগে ছুটে যাচ্ছে চিতাখোলার দিকে। চিতাখোলায় গিয়ে ঝোপজঙ্গলে ঢুকে গেছে।
পাগলের সঙ্গে তাল দিয়ে যাচ্ছি আমি। নিশ্চয় আপনি তারপর থেকে এদিকটায় এসে আপনার ওই সোনামানিককে খুঁজছেন?
ঠিক বলেছেন আজ্ঞে। হে হে। তাই খুঁজছি। একদিন পেয়েও ছিলাম।
সে তো বললেনই। বিয়াল্লিশ বছর আগে।
আজ্ঞে তা-ই। এ রকম রাতদুপুরে। এই এদিকটাতেই। এ রকম ক্ষয় হয়ে আসা চাঁদের আলোয়। সেদিন সঙ্গে আপনার মতো কেউ ছিল না। আমি একা। আমি তো তখন সোনামানিকের জন্য পাগল। ইচ্ছা হলে বাড়ি ফিরি না হলে ফিরি না। এলাকার লোকে তো বটেই, বাড়ির লোকেও ধরে নিয়েছে আমি পাগল হয়ে গেছি। বদ্ধ পাগল। ওই বিড়ালটাই আমার সর্বনাশ করে গেছে। ওটা ছিল বদআত্মা, প্রেতাত্মা। বিড়ালের রূপ ধরে আমার বাড়িতে ছিল। আমার সর্বনাশ করে চলে গেছে।
আমি একটু তাল দিলাম। ওরকমই ভাববার কথা।
আজ্ঞে আমি নিজেও টের পাচ্ছিলাম যে আমি বিড়ালটার জন্য আসলেই পাগল হয়ে গেছি। ওকে না পেলে আর ভালো হব না। ওই যে দিনমজুর লোকটা বলেছিল চিতাখোলার দিকে বিড়ালটাকে সে ছুটে যেতে দেখেছে, সে জন্য আমি এদিকটাতেই ঘোরাঘুরি করি। দিনরাত প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত এ রকম এক রাতে, এদিকটাতে একদিন পেলাম তাকে।
দয়ালবাবু থামলেন। বড় করে একটা শ্বাস ফেললাম। আহা, সেই পাওয়া মানে কী? আমার বুকটা যেন ভরে গেল। হে হে। আমি করছিলাম কী দাদা, অর্থাৎ সেই রাতে এদিকটায় এসে, ওই চিতাখোলার দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে লাগলাম, ওরে আমার সোনা রে, ওরে আমার মানিক রে, আমায় ছেড়ে তুই কোথায় চলে গেলি রে…। আমি এ রকম ডাকছি আর কাঁদছি। হঠাৎ দেখি, চিতাখোলার ঝোপজঙ্গলের ভেতর সবুজ মার্বেলের মতো দুখানা আলো জ্বলছে। জায়গাটা অন্ধকার। এ জন্য আলোটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ছোট সাইজের টর্চলাইটের আলোর আকৃতি হবে। আমার কান্না আর ডাক শুনে আলোটা যেন একটু স্থির হলো, তারপর দৌড়ে আসতে লাগল আমার দিকে। আমি হকচকিত। দিশাহারা। আরে, এই তো আমার সেই বিড়াল! আমার সোনামানিক। দৌড়ে এসে, কী বলব দাদা আপনাকে, অনেক দিন না দেখা বাবা-মাকে যেমন করে আঁকড়ে ধরে শিশু, ঠিক সেই ভঙ্গিতে বিড়ালটা লাফ দিয়ে আমার কোলে চড়ল। চড়ে এমন আকুলিবিকুলি করতে লাগল, যেন আমি তার জন্য যেমন পাগল হয়েছিলাম, সেও আমার জন্য ঠিক তেমন পাগল। আহা, আহা। আমি তখন দুহাতে তাকে বুকে জড়িয়ে আদর করছি আর কাঁদছি আর বিলাপ করছি। আমায় ছেড়ে তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি রে আমার সোনা, আমার মানিক…
তারপর, তারপর?
শেষ রাত পর্যন্ত সে আমার কোলে বসে রইল। তারপর লাফ দিয়ে কোল থেকে নেমে চোখের পলকে কোথায় যে উধাও হয়ে গেল, তার ছায়াটাও আর দেখতে পেলাম না। কিন্তু ওই যে উধাও হওয়ার এত দিন পর তাকে পেলাম…
কত দিন পর পেয়েছিলেন?
এগারো বছর পর। হে হে…
বলেন কী?
আজ্ঞে তাই। তত দিনে এগারো বছর কেটে গেছে।
ইতিমধ্যে কয়েকবার ব্যাগ কাঁধবদল হয়েছে আমার। এখন আবার এক কাঁধ থেকে অন্য কাঁধে আনলাম। পাগলা দয়াল ভালোই গল্প ফেঁদেছে। গল্পে মশগুল থেকে অনেকটা সময় কেটেছে আমার। রাস্তা ফুরিয়েছে চার ভাগের প্রায় তিন ভাগ। এখন আমরা চিতাখোলাটার একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছি। আমাদের পথটা চিতাখোলার পেছন দিকে।
দয়ালবাবু।
আজ্ঞে।
আপনি অঙ্কের টিচার ছিলেন। যাদবের চেয়েও নাকি পাটিগণিত ভালো বুঝতেন কিন্তু আপনার কথা শুনে, মানে আপনার অঙ্কে আজ দেখছি খুবই গণ্ডগোল।
আজ্ঞে কী রকম?
বিয়াল্লিশ বছর আগে প্রথম বিড়ালটার সঙ্গে এ রকম রাতে আপনার দেখা হলো।
সঠিক।
সেই দেখাটা হলো বিড়াল উধাও হওয়ার এগারো বছর পর।
সঠিক।
বিড়াল আপনার বাড়িতে ছিল কত দিন?
বছরখানেক।
তার মানে এ রকম রাতে যখন বিড়ালটাকে আপনি আবার পেলেন তখন তার বয়স…
বারো বছর।
এত বছর কি বিড়াল বাঁচে?
কী যে বলেন? বাঁচে না মানে? সে তো এখনো বেঁচে আছে।
বলেন কী?
ঠিকই বলছি আজ্ঞে। কপাল ভালো থাকলে আজও তার সঙ্গে আমার দেখা হতে পারে। যদি সেই বিয়াল্লিশ বছর আগের মতো কেঁদে কেঁদে তাকে আমি ডাকতে পারি…
ডাকুন না, দেখি। যদি আমার ভাগ্য ভালো হয় তাহলে অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা হবে। চৌষট্টি বছর বয়সের একটা বিড়াল দেখতে পাব। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক বিড়াল।
হে হে। তার মানে প্রথমে আমার বাড়িতে এক বছর, তারপর এগারো বছর, তারপর বিয়াল্লিশ বছর এই তো আপনার চৌষট্টি বছর?
ঠিক। এবার তাহলে দাদা আর রহস্যের মধ্যে না রেখে আপনার বয়সটা বলে ফেলুন।
৬১+১১+৪২ সমান সমান?
১১৪। তার মানে এখন আপনার বয়স ১১৪ বছর?
এমনই হবে।
আমি এবার হো হো করে হেসে উঠলাম। এখন আপনার ১১৪ বছর বয়স?
দয়ালবাবু অবাক। আজ্ঞে হ্যাঁ। সত্যি তাই।
১১৪ বছর বয়সী একজন মানুষ এভাবে এতটা পথ আমার সঙ্গে পা মিলিয়ে হেঁটে এল? এতটা পথ? কী করে সম্ভব?
এল যে তা তো আজ্ঞে দেখতেই পাচ্ছেন। হে হে।
তা পাচ্ছি।
তবে? যাহোক চিতাখোলার সামনে এসে গেছি। একটু চেষ্টা করে দেখি ওই সেই বিয়াল্লিশ বছর আগের সেই রাতের মতো কান্নাটা আসে কি না। আমার সোনামানিকটার দেখা পাই কি না।
আমি অতি উৎসাহের গলায় বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ দেখুন দাদা, দেখুন। যদি তেমন হয়, এই সুযোগে আপনার ওই ৬৪ বছর বয়সী বিড়ালটা আমিও একটু দেখে জীবনটা ধন্য করতে পারি।
হে হে, বুঝতে পারছি, আপনি আমার এই এতক্ষণ ধরে বলা কথার কোনোটাই বিশ্বাস করেননি। একটু ঠাট্টা-মশকরা করছেন, শ্লেষ করছেন। আমাকে ভাবছেন বদ্ধপাগল। ভাবুন দাদা, ভাবুন। তাতে কিচ্ছু হবে না। তবে কান্নাটা আমার প্রায় সেই রাতের মতোই পাচ্ছে। আমি এখন কেঁদে কেঁদে আমার সোনামানিককে ডাকব। তার আগে শেষ কথাটা আপনাকে বলি।
শেষ কথা মানে?
এরপর একটি কথাও আমি আপনাকে আর বলব না।
কেন বলবেন না, তা তো জানিই।
কেন বলুন তো?
চিতাখোলার এখান থেকে আমাদের পথ বদলে যাবে। আপনি যাবেন একদিকে, আমি যাব আরেক দিকে।
না, তা না।
তাহলে?
শুরু থেকেই টুকটাক মিথ্যা কথা আপনাকে বলেছিলাম। আমি ষোলঘরের লোক হলেও সেখানে আর যাব না। যাব ওই চিতাখোলায়।
বলেন কী?
আজ্ঞে এটাই সত্য কথা।
কেন, চিতাখোলায় যাবেন কেন?
আমি ওখানেই থাকি।
চিতাখোলায় থাকেন?
আজ্ঞে।
কেন?
ওটাই এখন আমার বাড়িঘর। আমি দাদা জীবিত না।
কী বলছেন কী আপনি?
ঠিকই বলছি। আমি মৃত। মারা গেছি ৩৪ বছর হলো। থাকি একই জায়গায়, তারপরও আমার সোনামানিকের সঙ্গে আমার দেখা হয় না। এত খুঁজি তাকে, এত কাঁদি তার জন্য, এত ডাকি সে আর আসেই না আমার কাছে। তার সঙ্গে আমার আর দেখাই হয় না। দেখি আজ শেষ চেষ্টাটা করে।
দয়ালবাবু সন্তানহারা পিতার মতো কাঁদতে লাগলেন। সোনা রে, ও সোনা, ও আমার মানিক, ও আমার সোনামানিক, আমায় ফেলে কোথায় চলে গেলি তুই? আমার কথা কি একবারও মনে হয় না তোর? একবারও কি ইচ্ছা করে না আমাকে দেখতে? আমি যে তোর জন্য মরে গিয়েও মরে যেতে পারছি না। মরে গিয়েও বেঁচে আছি তোর জন্য? সোনামানিক, ও সোনামানিক…
তারপর ঘটল আশ্চর্য এক ঘটনা। চিতাখোলার মাঝবরাবর এক ঝোপে জ্বলে উঠল সবুজ রঙের এক জোড়া আলো। মাঝারি সাইজের টর্চলাইটের মতো দুটো চোখ জ্বলতে শুরু করেছে। দয়ালবাবু আকুল হয়ে কাঁদছেন আর ডেকে যাচ্ছেন। তখন চোখের ওরকম আলো জ্বেলে জীবটা তিরের বেগে ছুটে এল দয়ালবাবুর দিকে। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখছি, মাঝারি সাইজের ছাগলের মতো সাদা একটা জীব। মুহূর্তেই চিনতে পারলাম। আরে এটা তো একটা বিড়াল! অতিকায় বিড়াল। এত বড় বিড়াল জীবনে কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না। বিড়াল এত বড় হতেই পারে না। কিন্তু আমি আমার চোখের সামনে দেখছি।
সেই বিড়াল দেখে দয়ালবাবুর কান্না আরও বাড়ল। দুহাত বিড়ালের দিকে বাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছেন, ওরে আমার সোনা রে, ওরে আমার মানিক রে, কত বছর পর তোকে আমি দেখছি রে! তুই কত বড় হয়ে গেছিস আমার সোনা, আমার মানিক…
দুহাতে বিড়ালটাকে কোলে নিলেন তিনি। আমার দিকে আর ফিরেও তাকালেন না। কান্না থেমে গেছে তাঁর। এখন শুধু বিড়ালটাকে নানা রকম আদুরে কথা বলছেন আর ধীরপায়ে বিড়ালটা কোলে নিয়ে চিতাখোলার দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। আমার কথা তাঁর যেন মনেই নেই।
দয়ালবাবুর কোল থেকে বিড়ালটা একপলক আমার দিকে তাকাল। সেকেন্ডের জন্য হবে। আমি স্পষ্ট দেখলাম সেই চোখ থেকে তীব্র লাল একটা রশ্মি এসে আমার বুকের দিকটায় লাগল। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
পরদিন সকালে মাঠে কাজ করতে আসা কিছু লোক আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে। গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়িতে নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান সাহেব ডাক্তার ডেকে আনান। আমার জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করেন।
জ্ঞান ফেরার পর একটু সুস্থির হতেই চারপাশে ভিড় করে থাকা লোকজন আর চেয়ারম্যান সাহেব জানতে চান, ঘটনা কী? কী হয়েছিল আমার? চিতাখোলার কাছে একা কেন গিয়েছিলাম রাতদুপুরে?
খুলে বললাম সব। শুনে লোকজন স্তব্ধ হয়ে রইল।
অতিবৃদ্ধ একজন মানুষ বললেন, দয়ালমাস্টার আর তার বিড়ালটা বহু বছর পরপর এমন ঘটনা ঘটায়। একা ওই পথে কাউকে পেলে তার পিছু নেয়। একা একা ওই পথে রাতবিরাতে চলাফেরা না করাই ভালো।
Post a Comment