ইরাকের রূপকথা: সওদাগরের স্বপ্ন
অনেক দিন আগে বাগদাদ শহরে এক ধনী সওদাগর বাস করতেন। খুব সুন্দর একটি বাড়ি ছিল তাঁর। বাড়ির পাশে ডালিমগাছের চমৎকার বাগান। কিন্তু এই সওদাগরের সুখ বেশি দিন থাকল না। তিনি ব্যবসায়ে মার খেয়ে এমন গরিব হয়ে গেলেন যে এখন তাঁকে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতে হয়।
এক রাতে তিনি ঘুমিয়ে আছেন, স্বপ্নের মধ্যে একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন সওদাগর। কে যেন তাঁকে বলছে, ‘শোনো! তুমি কায়রো চলে যাও। ওখানে গেলে অনেক টাকাপয়সা পাবে, ধনসম্পদ পাবে। দেরি কোরো না। কায়রো যাও।’
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিনি কায়রোর পথে রওনা হয়ে গেলেন। অনেক দিন পরে তিনি কায়রো শহরে পৌঁছালেন। তখন রাত হয়ে গেছে। রাতটি কাটানোর জন্য সওদাগর একটি মসজিদে ঢুকলেন।
কিছুক্ষণ পরে একদল চোর এল মসজিদের পাশে। তারা মসজিদের পাশের বাড়িটিতে চুরি করার মতলবে এসেছে। কিন্তু তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেলেন বাড়ির মালিক। তিনি হইচই করে বাড়ির অন্য সদস্যদের ডাকাডাকি করতে লাগলেন। এমন শোরগোল শুনে চোরের দল ভয়ে পালিয়ে গেল। গৃহকর্তার চিৎকারে ছুটে এল নৈশপ্রহরীরা। তারা চোরগুলোকে পেল না, পেল মসজিদে ঘুমিয়ে থাকা সওদাগরকে। তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করল এবং লাঠি দিয়ে পিটুনি দিল। মার খেয়ে বেচারা গেলেন অজ্ঞান হয়ে। সৈন্যরা সওদাগরকে কারাগারে পুরে দিলেন। ওখানে তিন দিন তিন রাত পড়ে থাকলেন সওদাগর।
তারপর বিচারক এসে সওদাগরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে তুমি? কায়রো শহরে কেন এসেছ তুমি?’
বেচারা সওদাগর জবাব দিলেন, ‘আমি বাগদাদের একজন সৎ ও পরিশ্রমী সওদাগর। খুব অভাবের মধ্যে পড়েছি আমি। সেদিন স্বপ্নে দেখলাম, একটি কণ্ঠ আমাকে বলছে, আমি যেন কায়রো চলে আসি। এখানে এলে নাকি আমি ধনসম্পদ পাব। কিন্তু ধনসম্পদের বদলে পেলাম লাঠির মার!’
এ কথা শুনে হেসে উঠলেন বিচারক। বললেন, ‘তুমি দেখছি খুবই বোকা! স্বপ্নে বিশ্বাস করো। আমি নিজেও তো অন্তত তিনবার স্বপ্নে দেখেছি একটি কণ্ঠ আমাকে বলছে, ‘বাগদাদে যাও। ওখানে ডালিমগাছের ধারে একটি বাড়ি আছে। ওই বাড়ির উঠানে আছে একটি ঝরনা। সেই ঝরনার নিচে তুমি অনেক ধনসম্পদ পাবে।’ তোমার কি মনে হয় আমি এতই বোকা যে স্বপ্নে কী বলল আর তাই শুনে আমি বাগদাদ ছুটে যাব?’
সওদাগরের নির্বুদ্ধিতায় বিচারক আবারও একচোট হেসে নিলেন। তারপর তিনি তাঁকে টাকাপয়সা দিলেন বাড়ি ফিরে যেতে। দ্রুত বাগদাদ ফিরে এলেন সওদাগর। কারণ, তিনি জানেন বিচারক যে বাড়ি, ডালিমগাছ ও উঠানের কথা বলেছেন, সেটি তাঁর নিজেরই বাড়ি, ডালিমগাছ ও উঠান।
বাড়ি ফিরেই তিনি উঠানের ঝরনার নিচে মাটি খুঁড়লেন। মাটির নিচে পেলেন ঘড়া বা কলসভর্তি সোনা, হিরে, পান্না ও মুক্তো। ‘বিচারকের স্বপ্নের কণ্ঠস্বরটি তাহলে সত্যি ছিল!’ আপনমনে হাসলেন তিনি। তারপর থেকে আবার সুখ-শান্তি ফিরে এল সওদাগরের জীবনে। তাঁকে আর কখনো অভাবে পড়তে হয়নি।
অনুবাদ: অনীশ দাস
Post a Comment