পাতাল-কন্যা মণিমালা – দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

পাতাল-কন্যা মণিমালা – দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার

এক রাজপুত্র আর এক মন্ত্রিপুত্র- দুই বন্ধুতে দেশভ্রমণে গিয়াছেন। যাইতে, যাইতে, এক পাহাড়ের কাছে গিয়া …সন্ধ্যা হইল!


মন্ত্রিপুত্র বলিলেন,- “বন্ধু, পাহাড়-মুল্লুকে বড় বিপদ-আপদ; আইস, ঐ গাছের ডালে উঠিয়া কোন রকমে রাতটা কাটাইয়া দিই।” রাজপুত্র বলিলেন,- “সেই ভাল।”

দুই জনে ঘোড়া বাঁধিয়া রাখিয়া, এক সরোবরের পাড়ে খুব উঁচু গাছের আগডালে উঠিয়া শুইয়া রহিলেন। অনেক রাত্রে রাজপুত্র মন্ত্রিপুত্র কি-জানি কিসের এক ভয়ঙ্কর শব্দ শুনিয়া জাগিয়া দেখেন, -বনময় আলো!- সেই আলোতে ওরে বাপরে বাপ্‌! রাজপুত্র মন্ত্রিপুত্রের গা-অঙ্গ ডোল হইল, গায়ে পায়ে কাঁটা দিল,- দেখেন, আকাশ পাতালে গলা ঠেকাইয়া এক কাল্‌-অজগর তাঁহাদের ঘোড়া দুইটাকে আস্ত আস্ত গিলিয়া খাইতেছে! অজগরের মুখে ঘোড়া ছটফট করিতেছে!

দেখিতে-দেখিতে ঘোড়া দুইটাকে গিলিয়া, যতদূর আলোকে দেখা যায়, অজগর, বনের পোকা-মাকড় খাইতে খাইতে ততদূর বেড়াইতে লাগিল। রাজপুত্র থর্‌ থর্‌ কাঁপেন! মন্ত্রিপুত্র চুপি-চুপি বলিলেন,-“বন্ধু। ডরাইও না, ওই যে আলো, ওটি সাত-রাজার ধন ফণীর মণি,-মণিটি নিতে হইবে।”

রাজপুত্র বলিলেন,- “সর্বনাশ! কেমন করিয়া নিবে?” “ভয় নাই, দেখ, আমি মণি আনিব।”

বলিয়া, মন্ত্রিপুত্র, আস্তে আস্তে নামিয়া আসিয়াই এক খাবল কাদা আনিয়া মণির উপর ফেলিয়া দিলেন। দিয়াই আপনার তরোয়ালখানি কাদার উপর উল্টাইয়া রাখিয়া, সর্‌সর্‌ করিয়া গাছে উঠিয়া গেলেন! সব অন্ধকার;-দুই জনে চুপ!

অজগর তার মণি! -সেই মণির আলো নিভিয়াছে; অজগর, হোঁস্‌ হোঁস্‌ শোঁস্‌ শোঁস্‌ শব্দে ছুটিয়া আসিল; দেখে, মণি নাই! অজগর তরোয়ালের উপর ফটাফট ছোবল মারিতে লাগিল। কাদার তলে মণি নিখোঁজ –তরোয়ালের ধারে অজগরের ফণায় রক্তের বান। চোখে আগুনের হলক, মুখে বিষের ঝলক, অজগর পাগল হইয়া গেল।

কাল্‌-অজগর পাগল হইয়াছে, -সারা বনের গাছ মুড়্‌মুড়্‌ করিয়া ভাঙ্গে, লেজের বাড়িতে সরোবরের জল শতখান হইয়া যায়। অবশেষে রাগে,দুঃখে, অজগর নিজের শরীর নিজে কামড়াইয়া তরোয়ালে মাথা খুঁড়িয়া মরিয়া গেল।

থর্‌ থর্‌ করিয়া দুই বন্ধুর রাত পোহাইল পরদিন রোদ উঠিলে, দুইজনে বেশ করিয়া দেখিলেন, যে, না-অজগর সত্যিই মরিয়াছে। তখন নামিয়া কাদামাখা মণি কুড়াইয়া দুই বন্ধু সরোবরে নামিলেন।

নামিতে নামিতে, দুই বন্ধু যতদূর যান, -জল কেবল দুই ভাগ হইয়া শুকাইয়া যায়! শেষে, মণির আলোতে দেখেন, পাতালপুরী পর্যন্ত এক পথ! দুইজনে চলিতে লাগিলেন।

খানিক দূর যাইতেই এক পরম সুন্দর অট্টালিকা। চারিদিকে ফুল-বাগান, ফুলে ফুলে ছড়াছড়ি, লতায় লতায়, পাতায় পাতায় জড়াজড়ি। দুই বন্ধু অট্টালিকার মধ্যে গেলেন। অট্টালিকার মধ্যে সোঁ সোঁ রোঁ রোঁ শব্দ। রাজপুত্র ভয়ে কাঁপিতে লাগিলেন। মন্ত্রিপুত্র বলিলেন,- “বন্ধু, ডরাইও না, মণি কাছে থাকিতে ভয় নাই।’

লক্‌লকে’ চক্‌চকে’ কোটি রঙ্গের কোটি সাপ ডিঙ্গাইয়া, সাপের উপর দিয়া হাঁটিয়া দুইজনে এক ঘরে গেলেন! সেখানে সাপের দেওয়াল, সাপের থাম, সাপের মেজে, সাপের পড়ি, সাপের মণির দেওয়ালগিরি, -লক্ষ সাপের শয্যায় মণিমালা রাজকন্যা নিশ্চিন্তে ঘুমাইতেছেন।

রাজপুত্র বলিলেন,-“বন্ধু, এ –কি!”
মন্ত্রিপুত্র বলিলেন,-“বন্ধু, দেখ, পাতালপুরীর পাতালকন্যা।”
আশ্চর্য হইয়া,- রাজপুত্র দেখিতে লাগিলেন।

ধীরে ধীরে মন্ত্রিপুত্র মণিটি নিয়া মণিমালার কপালে ছোঁয়াইতেই মণিমালা জাগিয়া উঠিয়া বসিলেন। রাজপুত্র মন্ত্রিপুত্রকে দেখিয়া এস্তে ব্যস্তে মণিমালা বলিলেন, -“আপনারা কে? এ যে কাল্‌-অজগরের পুরী, আপনারা কেমন করিয়া এখানে আসিলেন!”

মন্ত্রিপুত্র কহিলেন,- “রাজকন্যা, ভয় নাই; কাল্‌-অজগরকে আমরা মারিয়া ফেলিয়াছি। এই রাজপুত্র তোমার বর।” রাজপুত্র মণিমালা দুইজনে, মাথা নীচু করিলেন। হাসিয়া মন্ত্রিপুত্র মণিমালার গলার মালা রাজপুত্রের গলায় দিলেন, রাজপুত্রের গলার মালা মণিমালার গলায় দিলেন। চারিদিকে লক্ষ সাপের ফণা হেলিয়া দুলিয়া উঠিল।

সাপের পুরীতে পরম সুখে দিন যায়। কতক দিন পর, মন্ত্রিপুত্র বলিলেন.-“বন্ধু, আমরা তো এখানে সুখেই আছি, দেশে কি হইল কে বরণ করিয়া দেশে লইয়া যাইব।” রাজপুত্র বলিলেন,-“আচ্ছা।”

আবার সরোবরের পথে মণি দেখা দিল, মন্ত্রিপুত্র দেশে গেলেন। বন্ধুকে বিদায় দিয়া, মণি লইয়া রাজপুত্র ফিরিয়া আসিলেন। দু’জনে আছেন। রাজপুত্র পৃথিবীর কত কথা মণিমালাকে বলেন, মণিমালা পাতালের যত কথা রাজপুত্রের কাছে বলেন। বলিতে বলিতে, একদিন মণিমালা বলিলেন, “জন্মে কখনো পৃথিবী দেখিলাম না, দেখিতে বড় সাধ যায়।” রাজপুত্র কিছু বলিলেন না।

দুপুরে রাজপুত্র শুইয়া আছেন। রাজপুত্রকে ঘুমে দেখিয়া মণিমালা ক্ষার খৈল গামছা নিয়া মণিটি হাতে সরোবরের পথে পৃথিবীতে উঠিলেন।–“আহা! কি সুন্দর!” পৃথিবী দেখিয়া মণিমালা অবাক। মণিমালা বলিলেন, “মণি. মণি! উজ্‌লে’ ওঠ্‌ এই সরোবরের জলে আমি নাইব।”

অমনি মণির আলো উজ্‌লে’ উঠিল, সরোবরের মাঝখানে রাজহাঁসের থাক, শ্বেতপাথরের ধাপ, ধবধবে’ সুন্দর ঘাটলা হইল। মণিমালা ধাপের উপর মণি রাখিয়া, ক্ষার খৈল দিয়া গা-পা কচলাইতে লাগিলেন।

সেই সময় সেই দেশের রাজপুত্র সেই বনে শিকার করিতে আসিয়াছেন। তিনি সব দেখিলেন। দেখিয়াই রাজপুত্র ছুটিয়া আসিয়া জলে ঝাঁপ দিয়া পড়িলেন।

চমকিয়া মণিমালা দেখেন, -মানুষ! মণি লইয়া মণিমালা ডুব দিলেন। চক্ষের পলকে সব কোথায় গেল!- রাজপুত্র “হায় হায়” করিতে করিতে ফিরিয়া গেলেন।

কাঠকুমারী পেঁচার মা এক বুড়ী এই সব দেখিয়া। দেখিয়া বুড়ী চুপটি করিয়া রহিল।

শিকারে গিয়া রাজপুত্র পাগল হইয়া আসিয়াছেন; কত ওষুধ বিষুধ, কিছুতেই রোগ সারে না; রাজা রাণী অধীর, রাজ্যের লোক অস্থির। অবশেষে রাজা ঢেঁটরা দিলেন,-“রাজপুত্রকে যে ভাল করিতে পারিবে, অর্ধেক রাজত্ব আর রাজকন্যা তাকে দিব” কে ঢেঁটরা ছুঁইবে? কেহই ছুঁইল না। শেষে পেঁচোর মা বুড়ী এই কথা শুনিল। শুনিয়া বুড়ী উঠে কি পড়ে আছাড়ি বিছাড়ি সাত তাড়াতাড়ি আসিয়া ঢেঁটরা ধরিল।

রাজার কাছে গিয়া বুড়ী বলিল,-“তা রাজামশাই, আমি তো ওষুধ জানি,-তা আমি বুড়ো হাবড়া মেয়েমানুষ, তা আমার পেঁচোর সঙ্গে যদি রাজকন্যার বিয়ে দাও, তো রাজপুত্রকে ওষুধ দি।”

রাজা তাহাই স্বীকার করিলেন।
তখন পেঁচোর মা বুড়ী একরাশ তুলা, এক চরকা নিয়া পবনের নায়ে উঠিয়া বলিল,-
ঘ্যাঁঘর্‌ চরকা ঘ্যাঁঘর্‌,
রাজপুত্র পাগল!
হটর্‌ হটর্‌ পবনের না’,
মণিমালার দেশে যা।”
পবনের না’ মণিমালার দেশে গেল। বুড়ী সরোবরের কিনারে বসিয়া ঘ্যাঁঘর্‌ ঘ্যাঁঘর্‌ করিয়া চরকায় সূতা কাটিতে লাগিল।
আবার দুপুরে রাজপুত্র শুইয়াছেন; মণিমালা মণি নিয়া উঠিয়া আসিলেন,- “ও বুড়ী, বুড়ী, তুই কোথা’ থেকে’ এলি? আমাকে একখানা শাড়ী বুনিয়া দে।”
বুড়ী শাড়ী বুনিয়া দিয়া কড়ি চাহিল! মণিমালা বলিলেন,-“বুড়ী, কড়ি তো নাই, এই এক মণি আছে!”
বুড়ী বলিল-“তা, তা-তাই দাও।”
মণিমালা মণি দিতে গেলেন, বুড়ী খপ্‌ করিয়া মণিমালাকে পবনের নৌকায় উঠাইয়া বলিল,-
“ঘ্যাঁঘর্‌ চরকা ঘ্যাঁঘর্‌,
রাজপুত্র পাগল!
হটর্‌ হটর্‌ পবনের না’,
রাজপুত্রের কাছে যা।”

আর কী? বুড়ী মণিমালাকে রাজপুরীতে দিয়া, মণিটি লুকাইয়া নিয়া বাড়ীতে গেল।
রাজপুত্র ভাল হইলেন! মণিমালার সঙ্গে তাঁহার বিয়ে! পেঁচোর সঙ্গে রাজকন্যার বিবাহ হইবে কি না? সাত বচ্ছর নিখোঁজ পেঁচোর জন্য বুড়ী দেশে দেশে লোক পাঠাইল।
মণিমালা বলিলেন,- “আমার এক বৎসর ব্রত, এক বৎসর পরে যা’ হয় হইবে।”
সকলে বলিলেন,- “আচ্ছা।”
সকলে বলিলেন,- “আচ্ছা।”
মণি গেল, মণিমালা গেল, সাপের নিশাস গরল, সাপের পরশ হিম, আজ রাজপুত্র ঘুমে ঢুলু ঢুলু। ঢুলিয়া রাজপুত্র সাপের শয্যায় ঘুরিয়া পড়িলেন। শিয়রের সাপ ফণা তুলিয়া গর্জিয়া উঠিল, আশের সাপ পাশের সাপ, গা-মোড়া দিয়া উঠিয়া রাজপুত্রকে আষ্টে-পিষ্ঠে জড়াইয়া ধরিল। নাগপাশের বাঁধনে রাজপুত্র সাপের শয্যায় বিষের ঘোরে অচেতন হইয়া রহিলেন।

দোলা চৌদোলা পঞ্চকটক নিয়া সরোবরের পাড়ে আসিয়া মন্ত্রিপুত্র ডাকেন,- “বন্ধু! বন্ধু! পথ দেখাও।”
না, সাড়া শব্দ কিছুই নাই! দিনের পর দিন গেল, রাত্রির পর রাত্রি গেল, বন্ধু আর সাড়া দিল না। তখন মন্ত্রিপুত্র ভাবিত হইয়া পঞ্চকটক বনে রাখিয়া, বাহির হইলেন।
খানিক দূর গেলে, পথের লোকেরা বলিল,-“কে-গো তুমি কা’র বাছা, পেঁচোকে দেখিয়াছ? পেঁচো রাজার জামাই হইবে, পেঁচোর মা বুড়ী পেঁচোর খোঁজে পথে পথে ঘুরে।”
মন্ত্রিপুত্র বলিলেন,-“হাঁ, হাঁ, আমি পেঁচোকে দেখিয়াছি; তা সে রাজত্ব রাজকন্যা পাইল কেন?”
লোকেরা সকল কথা বলিল।
মন্ত্রিপুত্র বলিল,- “বেশ্‌ বেশ্‌! তা, পেঁচোর রূপটি,-রূপটি যেন কেমন?” লোকেরা পেঁচোর রূপের কথা বলিল।
শুনিয়া মন্ত্রিপুত্র চলিয়া আসিলেন।
পরদিন মন্ত্রিপুত্র করিলেন কি, পোশাক-টোশাক ছাড়িয়া, গালে মুখে কালি, গায়ে পায়ে ছেঁড়া কানি, বুড়ীর বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত। খক্‌ খক্‌ কাশি, খিল্‌ খিল্‌ হাসি, দুই হাতে দুই গাছের ডাল- পেঁচোর নাচে উঠান কাঁপে।
আথিবিথি বুড়ী ছুটিয়া আসিল,- “এই তো আমার বাছা!-আহা আহা বুকের মাণিক, কোথায় ছিলি ঘরে এলি?- আয় আয়, তোর জন্যে –
রাজ-রাজিত্বি দুধের বাটী,
রাজকন্যা পরিপাটি
সোনার দানা মোহর থান-
সাতরাজার ধন মণি খান-
-তোরি জন্যে রেখেছি!”
আহ্লাদে আটখানা বুড়ী গুড়ুসুড়ু মাণিটি বাহির করিয়া চুপি চুপি পেঁচোর হাতে দিল।

মণি পাইয়া পেঁচো তো তিন লাফে, ঘর!- “মা, মা, আমি তো ভাল হইয়াছি!- এই দেখ কেমন আমার নূপ, -নূপের গাঙ্গে নূপ ভেস্যে যায়।” বুড়ী বলিল,- “আহা আহা বাছা আমার! এত রূপ নিয়ে কোথায় ছিলি,- রাজকন্যা তোর জন্য কাঁদিয়া পাগল!
পরদিন বুড়ী আউল চুলের ঝুঁটি বাঁধিয়া, নড়ি ঠক্‌ঠক্‌, রাজার কাছে গেল,- “তা, তা, রাজা মশাই, রাজা মশাই, রাজকন্যা বাহির কর- পেঁচো আমার আসিয়াছেন। আহা আহা, পেঁচোর আমার যে রূপ,-রূপ নয় তো নূপ,-নূপের গাঙ্গে নূপ ভেস্যে যায়।” রাজা কি করেন, পেঁচোর সঙ্গে রাজকন্যার বিবাহ দিলেন।


বাসর ঘরে মন্ত্রিপুত্র পেঁচো রাজকন্যাকে সব কথা বলিলেন। শুনিয়া রাজকন্যা নিঃশ্বাস ছাড়িয়া বাঁচিলেন; বলিলেন,- “আমার ভাই মণিমালাকে আটক করিয়া রাখিয়াছেন।”

তখন মন্ত্রিপুত্র চুপি চুপি বলিলেন,- “আমি যা’ যা’ বলি মণিমালাকে চুপি চুপি এই সব কথা বলিও, আর এই জিনিসটি মণিমালার হাতে দিও।” বলিয়া মন্ত্রিপুত্র ফণীর মণিটি রাজকন্যার কাছে দিলেন। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন গেল। চা’র দিনের দিনে, রাত পোহাইলে, মণিমালা বলিলেন,- “রাজপুত্র, আমার ব্রত শেষ হইয়াছে, আমি আজ বরণ-সাজে সাজিয়া নদীর জলে স্নান করিব। আমার সঙ্গে বাদ্য-ভাণ্ডু দিও না, জন-জৌলুষ দিও না; কেবল এক পেঁচো আর রাজকন্যা যাইবেন।”

অমনি রাজপুরী হইতে নদীর ঘাটে চাঁদোয়া পড়িল। মণিমালা, পেঁচোকে আর রাজকন্যাকে নিয়া বরণ-সাজে স্নান করিতে গেলেন। স্নান না স্নান!- জলে নামিয়াই মণিমালা বলিলেন,-
“মণি আমার, আমায় ভূলে’ কোথায় ছিলি?”
“বুড়ীর থলে।”
কোথায় এসে আবার মণি আমায় পেলি?”
“পেঁচোর গলে।”

মণিমালা বলিলেন,-
“আজ তবে চল্‌ মণি, অগাধ জলে!”

দেখিতে-না-দেখিতে নদীর জল দু’ফাঁক হইল, পেঁচো আর রাজকন্যাকে নিয়া মণিমালা তাহার মধ্যে অদেখা হইয়া গেলেন।
রাজপুত্র করেন-“হায়!হায়!”
রাজা রাণী করেন- “হায়! হায়!”
মাথা খুঁড়িয়া বুড়ী মরিল, রাজ্য ভরিয়া কান্না উঠিল।

শিয়রের সাপ গুড়িসুড়ি, গায়ের সাপ ছাড়াছাড়ি,- রাজপুত্র চক্ষু মুছিয়া উঠিয়া বসিলেন।– তখন, মণির আলো মণির বাতি, ঢাক ঢোলে হাজার কাটি, রাজপুত্র মন্ত্রিপুত্র, মণিমালা আর রাজকন্যাকে লইয়া আপন দেশে চলিয়া গেলেন!

পাতালপুরীর সাপের রাজ্যের সকল সাপ বাতাস হইয়া উড়িয়া গেল।

No comments