রহিমুদ্দির ভাইয়ের বেটা – জসীম উদ্দীন
চাচা আর ভাস্তে সন্ধ্যা বেলায় আলাপ সংলাপ করিতেছে-
ভাস্তে: চাচা,আজ বাজারে গিয়াছিলাম৷
চাচা: যাবি না! তবে কি বাড়ি বসিয়া থাকবি নাকি?
ভাস্তে: একটা কুমড়া লইয়া গিয়াছিলাম৷
চাচা: নিবি না? খালি হাতে যাইবি নাকি?
ভাস্তে: একটা লোক আসিয়া কুমড়াটার দাম জিজ্ঞাসা করিল৷
চাচা: দাম জিজ্ঞাসা করিবে না তো কুমড়াটা মাগনা লইবে নাকি?
ভাস্তে: আমি আট আনা চাহিলাম৷
চাচা: আট আনা চাহিবি না? তবে কি মাগনা দাবি অত বড় কুমড়াটা?
ভাস্তে: সে লোকটা দুই আনা বলিল৷
চাচা: বলিবে না? অতটুকু কুমড়া তুমি আট আনা চাহিলেই সে নিবে কেন?
ভাস্তে: আমি বলিলাম, বাপের পুষ্যি কুমড়া খাইছ কোনো দিন?
চাচা: বেশ বলিয়াছিস৷ এত বড় কুমড়াটা ব্যটা কিনা দুই আনা মাত্র দর করিল!
ভাস্তে: এমন সময় এক পুলিশ আসিল৷
চাচা: আসিবে না? তুমি ভদ্রলোকের ছেলেকে বলিয়াছ, বাপের পুষ্যি কোনো দিন কুমড়া খাইছ? দেখ না কী হয়!
ভাস্তে: পুলিশ আসিয়া কুমড়াটার দাম জিজ্ঞাসা করিল৷
চাচা: করিবে না? পুলিস বলিয়া কুমড়াটা মাগনা লইবে নাকি?
ভাস্তে: আমি কুমড়ার দাম আট আনা চাহিলাম৷
চাচা: বেশ! বেশ! আমার ভাস্তে! দাম চাহিবি না? পুলিশ দেখিয়া ডরাইবি নাকি?
ভাস্তে: পুলিস দুই আনা দাম করিল ৷
চাচা: করিবে না? পুলিশ বলিয়া কি তাহারা জিনিসের দাম-দস্তর জানে না? বলি অতটুকু কুমড়া- তার দাম দুই আনার বেশি আর কত হইবে?
ভাস্তে: আমি বলিলাম, বাপের পুষ্যি কুমড়া খাইছ কোনো দিন?
চাচা: বেশ বলিয়াছিস৷ বেটা আট আনার কুমড়াটা কিনা না দুই আনায় লইতে চায়৷
ভাস্তে: তখন পুলিশ আমাকে ধরিয়া খুব মাইর দিল৷
চাচা: দিবে না? যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা?
ভাস্তে: মারিতে মারিতে আমাকে থানায় লইয়া গেল৷
চাচা: থানায় লইয়া যাইবে না? পুলিশকে তুমি অপমান করিয়াছ৷
ভাস্তে: সেখানে গেলে বড় দারোগা আসিল৷
চাচা: আসিবে না? দেখ না, তোমার ওপর আরও কি দুর্গতি হয়!
ভাস্তে: বড় দারোগা আসিয়া আমাকে ছাড়িয়া দিল ৷
চাচা: দিবে না? তুমি যে রহিমুদ্দির ভাইয়ের বেটা৷
Post a Comment