সিঁড়ি – স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

সিঁড়ি – স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

গল্পটা আসলে ছিল প্রেমের, কিন্তু এখন হয়ে গেছে লড়াইয়ের। আর সেই লড়াইটাও যে রিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় সেটা বোঝে মহী।

বিকেলের সময়টায় পীরবাবার পুকুরের দিক থেকে একটা ঠান্ডা হাওয়া দেয়। পাশের বড় অশ্বত্থ গাছ নিজের ঝাঁকড়া মাথাটা অল্প অল্প নাড়ে। হাওয়ায় ঝিরঝির শব্দ তুলোর মতো ভেসে বেড়ায় চারিদিকে।

মহী মাথা তুলে দেখল। বড় জলট্যাঙ্কিটা দেখা যাচ্ছে। ওদের মফস্সলের সব বাড়ির জল এখান থেকে সাপ্লাই করা হয়। ট্যাঙ্কের মাথায় উঠে যাওয়া জং-ধরা প্যাঁচানো লোহার সিঁড়িটা দেখা যাচ্ছে। ট্যাঙ্কের পাশেই পাম্প ঘর। বাচ্চুদা পাম্প অপারেটর। ওখানেই থাকে। ছোটবেলায় মহীরা সবাই মিলে বাচ্চুদার ঘরে গিয়ে হামলা চালাত। তারপর ওই সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেত উঁচু জলের ট্যাঙ্কটার কাছে। ট্যাঙ্কের তলার খোপের বেশ কিছু বুনো টিয়া পাখি থাকত। মহীর ইচ্ছে হত ওখান থেকে একটা-দুটো ধরে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে পুষবে।

তবে টিয়া ধরার চেয়ে অত্ত ওপর থেকে ওদের ছোট্ট মফস্সলটা দেখাই যেন ওর আসল উদ্দেশ্য ছিল। মহীর মনে হত এই উঁচু ট্যাঙ্কটা যেন ওদের মফস্সলের মাস্তুল!

এমনই একদিন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এদিক ওদিকে দেখতে গিয়েই বদলে গিয়েছিল ওর জীবনটা। খেলাধুলো আর হইচই-এর গল্পটা পালটে গিয়েছিল প্রেমের গল্পে!

কোন ক্লাস তখন মহীর? টেন হবে। গরমের ছুটির সেই দুপুরে ওদের নির্জন মফস্সলের মাস্তুলে উঠে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ও দেখে ফেলেছিল তাকে।

কত বছর হল? চোদ্দো? রামচন্দ্র বনবাস সেরে ফিরে এলেন বাড়ি? তবু ও তো ফিরতে পারল না!

মহী ট্যাঙ্কের মাথার দিকটায় তাকাল। কয়েকটা টিয়া উড়ছে। সবুজ পাতা-কুচির মতো লাগছে ওদের। পুজো আসছে। চারিদিকে যেন বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততা! তার মধ্যে ওর নিজেকে কেমন বেমানান লাগে!

ওদের মফস্সলেও একটা বড় মার্কেট হয়েছে। লোকে বলে শপিং মল। সবাই কত কিছু যে কিনছে! মনে হচ্ছে যেন শিগগির যুদ্ধ লাগবে। তাই দীর্ঘ কারফিউ-এর আগে যে যার মতো রসদ সংগ্রহ করে নেওয়ার এই শেষ সুযোগ।

আজও মা আলতো করে বলেছে ভাইটার জামা কেনার কথা। মহী তেমন কিছু উত্তর করতে পারেনি। যদি পতাদা আজ মাইনেটা দেয় আর যদি টিউশনির তিনটে বাড়ি থেকে সন্ধেবেলা টাকাগুলো পায় তবে কাল ভাইকে কিছু কিনে দেবে!

ভাইটা খুব ভাল। নাইন-এ পড়ে। কখনও কিচ্ছু চায় না। পুজোতেও নাকি অস্থায়ী দোকানগুলোয় ওয়েটারের একটা কাজ দেখছে।

মহীর চোখে জল চলে এল। একটা চাকরিও পাচ্ছে না! এত চেষ্টা করেও না! প্রতি সপ্তাহে কলকাতায় যায়। এই অফিস, ওই অফিস ঘোরে। কিন্তু তাও কিচ্ছু করতে পারছে না! হাতের লক্ষ্মীকে পায়ে ঠেললে কি এমনটাই হয়? ইশ্, তখন যদি চাকরিটা নিয়ে নিত!

ওদের বাবা মারা গেছে প্রায় ন’ বছর হল। বাবা কাছের স্পিনিং মিলটায় চাকরি করত। কিন্তু বাবার পরে সেখানে চাকরি হয়নি মহীর। আর সত্যি বলতে কী, তখন ভাবত বক্সিং থেকেই ভাল কাজ পেয়ে যাবে ও। ভাবত ভারতের হয়ে অলিম্পিকে অংশ নেবে।

আর খেলার সূত্রে চাকরিটা পেয়েও গিয়েছিল ঠিক!

পতাদা আজ লাইব্রেরিতেই রয়েছে। অবাক হল মহী। এর মধ্যে অফিস থেকে চলে এসেছে!

পতাদা মানে সুবিকাশ পাল। পাল বাড়ির বড় ছেলে। ওদের এই অঞ্চলে পাল বাড়ি বিখ্যাত। আগে পালদের জমিদারি ছিল জায়গাটা। স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরি সব পালদের তৈরি করা। এখন আর জমিদারি নেই, কিন্তু সম্মানটা রয়েছে। মহী এই লাইব্রেরিতেই বিকেলবেলা এসে বসে। চারটে থেকে সাতটা অবধি। পতাদা এর জন্য ওকে দেড় হাজার টাকা দেয়। টাকাটা নিতে খুব সঙ্কোচ হয় মহীর। যার বোনকে ভালবেসেছে তার কাছে হাত পাততে খুব লজ্জা লাগে ওর!

পতাদা বলল, ‘কীরে, তোর মাইনে পত্তরের দরকার নেই?’

মহী হাসল। দরকার যে কতটা সেটা বুঝবে কী করে পতাদা। আসলে মাসের প্রথমেই পতাদার বাড়ি থেকে কেউ না কেউ এসে টাকা দিয়ে যায়। এবার পাঁচদিন হয়ে গেল, কেউ আসেনি। আর মহীরও লজ্জা লাগে চাইতে!

পতাদা খামটা এগিয়ে দিল। বলল, ‘তিন হাজার আছে। বোনাস সহ।’

বোনাস! মহী অবাক হল। বোনাস পাবে সেটা তো জানত না! গত বছর পুজোর পর ঢুকেছিল এখানে। মাইনেটাই পাবে জানত। এটা ভাবতে পারেনি। ও হাসল। খামটা নিয়ে বলল, ‘তুমি আজ এখানে?’

পতাদা বারান্দার বেঞ্চটায় বসে বলল, ‘অফিস যাইনি। আসলে পমের ডির্ভোসটা আজ হয়ে গেল। মানে অর্ডারটা হাতে পেয়ে গেলাম আর কী! তাই.. তোর বউদি বলল বাড়িতেই থাকতে। ওঃ, খুব ঝড় গেল একটা!’

মহীর গলার কাছে হাওয়ার বুদ্বুদ আটকে গেল যেন! ডির্ভোসটা হয়ে গেল! ও লাইব্রেরির কাঠের ভাঁজ করা দরজাটার তালাগুলো খুলতে খুলতে কোনও মতে বলল, ‘ও ঠিক আছে তো?’

পতাদা হাসল, ‘হ্যা। ঠিকই আছে। জানিস তো কেমন মেয়ে! নিজে পছন্দ করে বিয়ে করল। নিজেই ভাঙল! ও দিব্যি আছে। এখানে ওখানে ঘুরছে। কলকাতায় যাচ্ছে। নাইট ক্লাবে-টাবেও যায় শুনেছি। আজও খুব হাসিখুশি রয়েছে। বাড়িতে ভাল লাগছিল না, আমিও তাই বেরিয়ে পড়লাম। ভাবলাম তোর মাইনেটা দিই আর লাইব্রেরিটাও দেখে যাই।’

লাইব্রেরি ঘর খুলে ফ্যান চালিয়ে দিল মহী। তারপর টুলটা টেনে বসল। পতাদাও এসে বসেছে পাশে। বলল, ‘কে জানে আবার বিয়ে করবে কিনা!’

মহী কী বলবে বুঝতে পারল না। পম আবার বিয়ে করবে? কাকে? ও পাশের বোতল থেকে জল খেল একটু। এখনও পমের কথা মনে করলে গলা শুকিয়ে আসে ওর।

পতাদা আবার বলল, ‘আর করাও উচিত। কতই বা বয়স বল? কিন্তু কী যে…’

পতাদা কথাটা শেষ করতে পারল না। তার আগেই দরজার কাছে কার যেন ছায়া পড়ল। মুখ তুলল মহী। আর সঙ্গে সঙ্গে মনে হল শিড়দাঁড়া দিয়ে কুড়িটা কাঠবিড়ালি দৌড়ে গেল একসঙ্গে! মনে হল জল ট্যাঙ্কির সমস্ত টিয়া উড়ে গেল বুকের ভেতর। ঝাঁকড়া অশ্বত্থ মাথা নাড়িয়ে ঝরিয়ে দিল সব পাতা! ও দেখল পম এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়।

নীল হলুদের কল্কা করা চুড়িদার পরে রয়েছে পম। দেখে মনে হচ্ছে যেন সদ্য স্নান সেরে এসেছে। মহী বুঝল বুদ্বুটা বড় হচ্ছে ক্রমশ।

পম বলল, ‘দাদা, তোর মোবাইলটা ফেলে এসেছিস আবার? এই নে, বউদি দিয়ে দিল।’

পতাদা জিভ কাটল। উঠে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে বলল, ‘তুই আনলি কেন?’

পম বলল, ‘আমি শপিংয়ে যাচ্ছি। গাড়ি আছে সঙ্গে। তাই দিয়ে গেলাম।’

‘আমিও যাব, চল।’ পতাদা মহীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এলাম রে।’

পতাদা এগিয়ে গেল বারান্দা দিয়ে। পম যেতে গিয়েও থমকাল। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মহীর দিকে। এগিয়ে এল একটু। তারপর চাপা গলায় বলল, ‘তোমাকে আমার একটু দরকার। একটা কাজ আছে। পারবে?’

গরমের ছুটির সেই দুপুরটা এখনও মনে আছে মহীর। ট্যাঙ্কের ওই নড়বড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে তাকাচ্ছিল এদিক ওদিক। আর ঠিক তখনই চোখে পড়েছিল পমকে। একটু দূরে ওদের বাড়ির তিনতলার ছাদের ফাইবার গ্লাসে ছাওয়া অংশে টাঙানো দোলনায় দুলছিল পম।

সেদিন হাওয়া দিচ্ছিল খুব। পমের চুলগুলো নরম চিকের মতো উড়ছিল! সেদিন রোদে কি কয়েকমুঠো বেশি আনন্দ ছিল? হাওয়া কি দু’-চার ভাঁজ বেশি ভাললাগা পুরে দিচ্ছিল মনে মনে? নাকি.. নাকি.. না, আজও ঠিক বুঝতে পারে না মহী! শুধু বোঝে জীবনে এক একটা সিঁড়ি থাকে যা মানুষকে একটা গল্প থেকে অন্য আর একটা গল্পে উঠিয়ে নিয়ে যায় অনায়াসে!

বক্সিং পাগল ছেলেটার ভেতরে এমন যে আর একটা ছেলে ছিল সেদিনের পর থেকে বুঝেছিল মহী!

সেই শুরু, তারপর যেখানে পম সেখানেই ও। পড়ার থেকে মন সরতে শুরু করল। বক্সিং থেকেও পরিশ্রম কমতে লাগল। ক্লাসে স্যারের মারের সময়ও চোখে সরষে ফুলের মধ্যে পমের মুখটা দেখতে পেত ও।

একমুঠো মফস্সল ওদের! মানুষের ব্যস্ততা কম, কৌতুহল বেশি। তাই মহীর একাগ্রতা ধরা পড়তে সময় লাগল না। তখনও বাবা বেঁচে। এক বিকেলে বাবা বেশ করে ধোওয়া কাচা করল মহীকে। কিছুদিন পর পতাদাও রাস্তায় ধরে শান্তভাবে বোঝাল। কিন্তু মহী শুনল না।

শুনবেটা কী করে? পমকে দেখলেই যে শরীরের সমস্ত শিরা উপশিরায় প্যাঁচ লেগে যায় ওর! বুকের ভেতর পাঁজরগুলো আপনা থেকেই ভাঙতে থাকে! পমকে দেখলেই যে মনে হয় এতদিনে ও বুঝেছে কেন ঈশ্বর এই বিরহীর মতো মফস্সলে পাঠিয়েছেন ওকে!

এরপর এক বিকেলে একটা কাণ্ড ঘটল। পম নাচ শিখতে যেত তনিমাদির কাছে। মহীও সেই সময়টায় নাচের ক্লাসের থেকে একটু দূরে একটা বটতলায় বসে থাকত একা।

সেদিন নাচের পরে আচমকাই পম এসে একদম দাঁড়িয়েছিল সামনে। মহী কী করবে বুঝতে না পেরে জোরহাত করে নমস্কার করে ফেলছিল প্রায়।

পম বলেছিল, ‘তুমি তো বক্সিং কর, না? তোমাকে আমার একটু দরকার। একটা কাজ আছে। পারবে?’

সময় চলে যায়। তবে তার ভাঁজে থেকে যাওয়া কথারা পূর্বজন্মের স্মৃতির মতো কখনও কখনও ফিরে আসে একা!

আজ, এত বছর পরে আবার সেই বটতলায় দাঁড়িয়ে সব মনে পড়ল মহীর। একটু দূরে তনিমাদির নাচের স্কুলটা দেখা যাচ্ছে। তালা বন্ধ। তনিমাদি আর নেই। চারিদিকে আগাছা জন্মে গেছে। পোড়া পাঁউরুটির মতো রং ধরেছে দেওয়াল। সবটাতেই কেমন যেন মনখারাপের প্রজাপতিরা উড়ছে!

একটু দূরে গাড়ি থেকে নামল পম। একাই এসেছে। মহী সোজা হয়ে দাঁড়াল। আর কী অবাক দেখল আবার পাঁজরে চাপ শুরু হয়েছে! শিরা উপশিরায় লেগে যাচ্ছে জট! দেখল রোদের ভেতর আবার কে যেন শয়তানি করে পুরে দিচ্ছে আনন্দ!

পম কোনও ভণিতা না করে বলল, ‘ব্লু স্টার ক্লাবটা আছে না? ওর সামনে দিয়ে গেলেই কয়েকটা ছেলে খুব খারাপ কথা বলে আমায়। একদিন হাত দিয়ে অসভ্য ইঙ্গিত করেছে, জানো?’

মহী তাকাল। সেদিনও এমন করে বলেছিল না? বলেছিল না অঙ্কের স্যার অসভ্যের মতো পিঠে হাত বোলায়! বলেছিল না মহী তো বক্সিং জানে! এর একটা বিহিত ওকে করতেই হবে!

আজও পম বলল, ‘তোমায় এর একটা বিহিত করতে হবে। করতে হবেই!’

মহী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বিহিত করার ও কে? এই যে পম ওকে দিয়ে হাজারটা কাজ করিয়ে নিত। ইচ্ছে মতো খাটিয়ে নিত। আর মহী ভালবাসার কথা বললেই কাটিয়ে দিত! এই যে, কলেজে উঠে ডাক্তার ছেলে দেখে সবার অমতে পম বিয়ে করে নিয়েছিল। মহীর দিকে ফিরেও তাকায়নি! তার? তার বিহিতটা করবে কে? তবে আজ কেন মহী বিহিত করতে যাবে এইসব ঝামেলার? ডাক্তারকে বিয়ে করে তিন-চার বছর ঘর করে এই যে ফিরে এল, এতে মহীর কোন লাভটা হল? এতদিন তো এসেছে এখানে, একবারও কি ওর সঙ্গে কথা বলেছে পম? আর যখন ব্লু স্টারের ছেলেগুলো অসভ্যতা করছে তখন কেন মহীকে তাদের শায়েস্তা করতে হবে? পমের এইসব অত্যাচারের বিহিত কে করবে এখন?

‘কী হল? পারবে না?’ পম অভিমানী চোখে তাকাল।

মহী মাথা তুলল। যা সমস্ত কড়া কথা মনে মনে ভেবেছে এতক্ষণ, কিছুই বলতে পারল না। বরং নরম গলায় বলল, ‘সেই অঙ্কের মাস্টার থেকে পুজোর ভিড়ের লোফার ছেলে… তোমার কথায় কী না করেছি পম! এটাও করব।’

পম ঘাড় বেঁকিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে, এটা করে দাও। আমি তোমার দিকটাও দেখব।’

‘মানে!’ মহী ভুরু কোঁচকালো, ‘প্লিজ পম, তোমায় কিছু করতে হবে না। আমি বলেছি কোনওদিন কিছু করতে? প্লিজ, কিচ্ছু কোরো না!’

পম এবার স্পষ্ট করে তাকাল মহীর দিকে। তারপর বলল, ‘কেন? মানে লাগবে আমার থেকে কিছু নিতে?’

মহী আবছা গলায় বলল, ‘মান? তোমার সামনে সেটা কি কখনও দেখিয়েছি আমি? তোমার জন্য সবটাই করা যায় পম। কেন করা যায়, তুমি বুঝবে না!’

পতাদাদের বাড়িতে আজ সত্যনারায়ণের পুজো। মহীকে বলেছিল সন্ধেবেলা যেতে। কিন্তু ও যেতে পারেনি। দুর্গা পুজোর ছুটির পরে আজই টিউশন শুরু করেছে। কামাই করলেই কথা শোনাবে।

সব সেরে পতাদাদের বাড়িতে আসতে মহীর প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গেছে।

পতাদা বাইরেই ছিল। ওকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল, ‘এই তোর আসার সময় হল? প্রায় সবাই খেয়ে চলে গেল! এসেছিস কেন? পাতা কুড়োতে?’

মহী হাসল, ‘জানোই তো পতাদা। পড়ানো থাকে না!’

পতাদা বলল, ‘বেশি সিনসিয়ারিটি দেখালে আজকাল মানুষ হ্যাংলা ভাবে। অত সিনসিয়ার হতে কে বলেছে তোকে? যা ওপরে। পম খুঁজছে। একটা মোবাইলও তো রাখতে পারিস! কত টাকা লাগে!’

মহী হেসে বাড়ির ভেতরে ঢুকল। পম খুঁজছে!

আচ্ছা, মোবাইল থাকলে কী হত? পম কি ওকে কল করত? মাঝরাতে ‘কী করছ?’ লিখে মেসেজ করত? আচমকা কি একগাদা হাসিখুশি গোল্লা পাঠিয়ে বলত, ‘আজ খুব ভাল লাগছে।’

একটা মোবাইলের কত আর দাম! পতাদা বলতেই পারে। কিন্তু কত যে দাম মহী জানে ! গত দু’দিন আগে বাড়িওয়ালা এসে ভাড়া বাড়াতে বলে গেছে। মায়ের পেটে পাথর ধরা পড়েছে। ভাইয়ের নাকি এবার একজন ইংরিজির স্যার না রাখলে হচ্ছে না আর! মোবাইল থাকলে কি এসব হয়ে যেত!

মহী চোয়াল শক্ত করল। পৃথিবীতে পরিষ্কার দুটো ভাগ আছে। একটা পতাদাদের ভাগ। আর একটা মহীদের। পতাদাদের ভাগে ঢুকতে হলে যে টিকিটটা লাগে তার নাম টাকা। ওটা মহীর নেই। তাই স্বপ্নেও পোলাও খাওয়া বারণ। কারণ মনে মেদ জমলে গরিবের বিপদ অনিবার্য!

বাড়ির এই অংশটা বেশ নিঃঝুম। আগে এসেছে বেশ কয়েকবার। আসলে পম যে ওকে পাত্তা দেয় না সেটা জেনে যাওয়ার পর থেকে পতাদা বা বাড়ির অন্যান্যরা মহীকে আর থ্রেট মনে করত না। বরং বিনি-পয়সায় একজন বাজার সরকার পেয়ে গিয়েছিল সবাই।

পমের বিয়ের পর আর এই অংশে আসেনি মহী। আজ এতদিন পরে কেমন যেন বাধো বাধো ঠেকল ওর।

সামনের দরজাটা ভেজানো। হালকা সবুজ পরদা ঝুলছে। মহী বুঝতে পারল না কী করবে। আজও পমের নাম উচ্চারণ করতে গেলে গলা কাঁপে ওর। লজ্জা লাগে। জানে সবটাই অনর্থক। সবটাই অকারণ। তাও লাগে!

মহী আলতো করে দরজায় টোকা দিল।

‘কে?’

‘আমি।’ মহী নরম গলায় বলল।

একটু পরে দরজা খুলে বেরিয়ে এল পম। চুল খোলা। হাতকাটা নাইটি পরা। সুন্দর ক্রিমের গন্ধ বেরোচ্ছে। মহীর মাথা নিমেষে ভারী হয়ে গেল। যাকে জীবনে এতটা চেয়েছে সে এত কাছে ওর, কিন্তু তবু ওর নয়। এ যে কী কষ্ট কাউকে ও বোঝাতে পারবে না।

পম বলল, ‘এই আসার সময় হল? একটা মোবাইল রাখতে পার না? ক’লাখ টাকা দাম?’

মাথা নিচু করে নিল মহী। পম বকলেও ভাল লাগে।

‘ঠিক আছে। এটা ধর।’ পম হাতটা বাড়িয়ে দিল।

‘কী এটা?’ পমকে দেখতেই এত ব্যস্ত ছিল মহী যে আর হাতে কিছু আছে কিনা দেখেইনি।

‘একটা ফোন নম্বর আছে। কলকাতার। কাল অবশ্যই কল করবে। চাকরি হয়ে যাবে। কমপিউটার জান তো? আমি কিন্তু না জেনেই বলে দিয়েছি যে জানো।’

‘চাকরি।’ মহী কী বলবে বুঝতে পারল না, ‘তুমি…’

‘আম খাও। গাছ গুনতে যেও না।’ পম নাক টানল, ‘আমি তো সারা জীবন শুধু তোমার থেকে নিয়েই যাই বলে মনে কর তুমি। আমায় কী ভাব, হ্যাঁ। ব্লুস্টারের ছেলেগুলোকে তুমি যে টাইট দিয়েছ আমি জানি। কিন্তু সেটা কি ভাল মনে করেছ?’

মহী বলল, ‘এসব কেন বলছ পম? আমি কি কোনওদিন কিছু বলেছি? আর এটা কি তার দাম?’

‘সব বলতে হয়?’ পম চোয়াল শক্ত করল, ‘দেখ, সেই সময়ে তোমায় দেখে আমার সেভাবে প্রেম আসেনি। আমি কী করব বল। জোর করে, লজিক দিয়ে কি প্রেম হয়? তবে? আর সত্যি বলতে, কী করো তুমি? একটা কিছু করতে তো হবে। তারপর তো কোনও মেয়ে তোমার কাছে আসবে। নাকি?’

‘মানে!’ মহী বুঝতে পারল না পম কী বলছে।

পম বলল, ‘কাল চলে যাবে ঠিক মতো। বক্সিংটাও তো করলে না মন দিয়ে! কিছুই করলে না তুমি। আশ্চর্য একটা ছেলে বটে! ছেলেগুলো এমনই হয়। যাকে ভালবেসে বিয়ে করলাম, দেখলাম বিয়ের পরে আর একটা মানুষ! মারছে। গালাগালি দিচ্ছে। নোংরামো করছে! আচ্ছা, ছেলেদের মধ্যে কি ব্যালেন্স বলে কিছু নেই! হয় আমার এক্স-বরের মতো শয়তান নয়তো তোমার মতো ক্যালানে! কেন বলতো?’

মহী কী বলবে বুঝতে পারল না। পম চলে যাওয়ার পর ওর সমস্ত ইচ্ছেগুলোই যেন কেমন উবে গেছে! মনে হয় কে যেন সব শুষে নিয়েছে! সবকিছুতেই ক্লান্তি আর বিরক্তি আসে। আসলে এসব বোঝাবে কাকে!

মহী হাতের কাগজটাকে ভাঁজ করে ঢুকিয়ে রাখল পকেটে।

পম বলল, ‘কেউ তোমায় কেন ভালবাসবে? কেন স্বপ্ন দেখবে তোমায় নিয়ে? শুধু গায়ের জোর আছে বলে? কাজকম্মও তো একটা যোগ্যতা নাকি! কাল যাবে? বুঝলে? যাও, খেয়ে নাও এবার। অনেক বকা খেয়েছ আমার!’

পম দরজা বন্ধা করে দিল। মহীর মাথা ঘুরছে! কী বলে গেল পম। এসবের মানে কী? ওকে ভালবাসবে কে? কে স্বপ্ন দেখবে ওকে নিয়ে? কেন ওকে কেউ চাকরি খুঁজে দেবে! কী ঘটছে চারিদিকে! মহী ভাবল এসবের মধ্যে কোনও ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে? ভাবল চাকরিটা পেলে কি তবে বিপ্লবের গল্পটা আবার প্রেমের গল্পে বদলে যাবে?

ফার্ন রোডটা খুঁজে পেতে কোনও অসুবিধে হল না মহীর। বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে হাঁটাপথ। এখন সুদেশ আগরওয়ালের বাড়িটা খুঁজে পেলেই হয়!

পমের কথামতো পরের দিন সকালেই কেষ্টাদার দোকান থেকে ওই নম্বরটায় ফোন করেছিল মহী। দু’বার রিং হতেই ফোনটা ধরেছিল সুদেশ। সামান্য টান থাকলেও বেশ ভাল বাংলা বলে লোকটা। মহীর কথা শুনেই বলেছিল, ‘আপনি চলে আসুন আজ। গনেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউতে আমার অফিস। ঠিকানাটা লিখে নিন। বিকেল তিনটের মধ্যে চলে আসুন। কেমন?’

নিজের সার্টিফিকেট নিয়ে ভয়ে ভয়েই ট্রেন ধরেছিল মহী। বহুদিন আগে একবার একটা চাকরি পেয়েছিল ও। খেলার সূত্রে। শুধু শর্ত ছিল চণ্ডীগড় যেতে হবে।

চাকরিটা নেয়নি মহী। পমকে ছেড়ে থাকার কথা যে ভাবতেই পারেনি। তখনও বিয়ে হয়নি পমের। যদিও পম মহীকে ‘না’ করেছে, তাও ও ভাবত এই ‘না’-টা ঠিক ‘হ্যাঁ-তে পালটে নেবে একদিন। কিন্তু তার জন্য তো ওকে থাকতে হবে পমের কাছে। সেখানে চণ্ডীগড় যে অনেক দূর!

ব্যাপারটা মা জেনেছিল পরে। তাও এক বন্ধুর মুখ থেকে। এত অবাক হয়েছিল মা যে কিছু বলতেই পারেনি প্রথমে। তারপর আবছাভাবে বলেছিল, ‘প্রেম? বোকা তুই?’

এখন রাতে যখন সব টিউশনি সেরে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরে, মহী ভাবে সেই চাকরিটার কথা। ভাবে জীবন কী হতে পারত! ভাবে, এই অনিশ্চয়তা আর কষ্টের থেকে কতটা দূরে থাকত ও!

পম তো এলই না! চাকরিও হল না! একটা আধ ভাঙা জীবন নিয়ে খারাপ সাইকেলের মতো ও পড়ে রইল এক কোণে।

কিন্তু আজ এসব মনে হচ্ছে না! পমের সেদিনের কথাগুলোর ভেতরে আবছা একটা ছবি দেখতে পাচ্ছে ও।

অফিসে দেখা করার পর সুদেশ বেশি সময় নেয়নি মহীর। দু’চার মিনিট দেখেই বলেছিল কাজটা হয়ে যাবে ওর। এখন সাড়ে আট হাজার পাবে। পরে ভাল কাজ করলে বাড়তে পারে মাইনে।

মহী কী বলবে বুঝতে পারছিল না। ভাবতেই পারছিল না সত্যি পেয়ে গেছে কাজটা।

সুদেশ বলেছিল, ‘কাজটা কিন্তু অফিসের নয়। আমার বাড়ির। আমার মায়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু শি ইজ কোয়াইট স্ট্রং। নানান বিজনেস দেখাশোনা করে। মায়ের একজন ম্যান ফ্রাইডে লাগবে। ব্যাঙ্ক, মায়ের বুটিক, রেস্তোরাঁ আর বাড়ির কাজ কম্মে হেল্প করে দেবে। শি ইজ আ নাইস ওম্যান। ইউ উইল লাইক ইট। কোনও প্রবলেম নেই তো?’

মহী বুঝতে পারছিল কী কাজ। কিন্তু তাতে কী? কাজ তো! এই তো কেউ পায় না আজকের বাজারে।

সুদেশ বলেছিল, ‘পরের স্যাটারডে আমার বাড়িতে আসুন। বিকেলে। দেখে নেবেন বাড়িটা। প্লাস অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারও নিয়ে নেবেন। কেমন?’

আজ সেই শনিবার। ওর চাকরির চিঠি পাওয়ার দিন।

কাজটা শুনে মা একটু খুঁতখুঁত করছিল। বলেছিল, ‘একটা বুড়ির কাজের লোক হবি?’

‘মা’ মহী হেসেছিল, ‘ওভাবে দেখছ কেন? আসলে ভদ্রমহিলার একজন সেক্রেটারির দরকার। এভাবেও তো ভাবতে পার। ওদের নানান ব্যবসা আছে। ভদ্রমহিলা নিজেই দু’-তিনটে দেখাশোনা করেন। তার একজন সেক্রেটারি গোছের লোক তো লাগবেই, তাই না?’

বাড়িটা বেশ বড়। তাই বিশেষ খুঁজতে হল না।

দরোয়ানকে বলাই ছিল বোধহয়। খুব সহজেই বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল মহী।

তবে বাড়িটা খা খা করছে। একটু ঘাবড়ে গেল ও। কেউ নেই নাকি? এত বড় বাড়ি ফাঁকা। এদিক ওদিক দেখে কী করবে বুঝতে পারল না মহী। সামনে দিয়ে একটা সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে। উঠবে কি?

‘আরে তুমি এসে গেছ?’ সুদেশের গলা পেল মহী। আপনিটা যে তুমি হয়ে গেছে সেটা কানে লাগল বেশ।

মহী মুখ তুলল। সিঁড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুদেশ। পরনে পুরনো দিনের হিন্দি ছবিতে দেখা হাউস কোট।

‘কাম।’ সুদেশ ডাকল ওকে।

মহী সিঁড়িতে পা দিল। লড়াইয়ের গল্প থেকে অন্য নিশ্চয়তার গল্পে ওঠার একটা সিঁড়ি।

দোতলায় উঠেই একটা বড়, লম্বা বারান্দা। মহী দাঁড়াল।

সুদেশ বলল, ‘সরি, আজই বাড়িতে কেউ নেই। আচানক সবাইকে একটা নেমন্তন্নে যেতে হয়েছে। যদি তোমার একটা কনট্যাক্ট নম্বর থাকত জানিয়ে দিতাম। এবার একটা মোবাইল কিনে নাও। মা-ই হয়তো দেবে। যাক গে, বাড়িটা তো চেনা হল। আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা নিয়ে যেও। এসো আমার সঙ্গে।’

সুদেশের পেছন পেছন এগোল মহী। বারান্দার পাশে সার দিয়ে কয়েকটা দরজা।

সুদেশ একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাকাল ওর দিকে। তারপর আচমকা কিছু মনে পড়ে গেছে এমন মুখ করে বলল, ‘আরে, একটা কাজ করতে পারবে আমার? ভুলেই গেছিলাম।’

‘হ্যাঁ স্যার বলুন।’ মহী নিজের কথাতে নিজেই অবাক হয়ে গেল। ‘স্যার’! মনে মনে তবে ও কাজে ঢুকে পড়েছে।

সুদেশ বলল, ‘আমার হুইস্কি ফুরিয়ে গেছে। টাকা দিচ্ছি। নিয়ে আসবে একটু। কাছেই দোকান। গড়িয়াহাট মোড়ে। পাঁচ মিনিট লাগবে জাস্ট। প্লিজ নিয়ে এসো।’

ঢোঁক গিলল মহী। এসব করতে হবে নাকি? কিন্তু এখন তো ‘না’ করার উপায় নেই! ও বলল, ‘দিন স্যার।’

‘গুড’ হাসল সুদেশ, ‘আই লাইক ইট। এখানে যদি ভাল কাজ করো, আমি তোমায় পরে আমার কোম্পানিতে অ্যাবসর্ব করে নেব। দাঁড়াও।’

দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল সুদেশ। একটা পরে পাঁচটা এক হাজার টাকার নোট এনে হাতে ধরাল মহী। বলল, ‘নাও, গো কুইকলি।’

সুদেশ ঘরে ঢুকে গেল আবার। দরজা ভেজিয়ে দিল। মহীও পেছনে ফিরল। কিন্তু যেতে পারল না। ঘরের ভেতর থেকে ওর নাম ধরে ডাকল সুদেশ।

মহী দাঁড়াল, ‘হ্যাঁ স্যার?’

‘দরজাটা খোলো একটু।’

মহী আলতো হাতে ফাঁক করল দরজাটা। খাটের ওপর বসে রয়েছে সুদেশ।

বলল ‘আরে হুইস্কির নামটা জেনে যাবে তো।’

‘হ্যাঁ স্যার, বলুন..’ মহী কথা শেষ করতে পারল না।

ঘরের ভেতরেই আর একটা দরজা খুলে গেল এবার। আর মহী অবাক হয়ে দেখল সেখান থেকে ভিজে চুলে একটা তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে এল পম।

গলার কাছে হাওয়ার বুদ্বুদ আটকে গেল মহীর। বুকের পাঁজরগুলো কে যেন মট মট করে ভেঙে দিল সব। শিরা উপশিরায় শুধু গিঁট আর গিঁট।

পম তোয়ালেটাকে বুকের কাছে ধরে তাকাল মহীর দিকে। মহী নড়তে পারছে না। আগুন জ্বলছে কোথাও! শরীরের ভেতরে রাগ পাঁক দিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে সুদেশের মুখে ছুঁড়ে মারে চাকরি। মনে হচ্ছে সুদেশকে ছিঁড়ে ফেলে দেয় একদম! এভাবে চাকরি পেল ও? পম এইভাবে চাকরি দিল।

মদের নামটা যেন কী বলল সুদেশ? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না। মনে হচ্ছে মাথাটা ফেটে যাবে রাগে। হাতের মুঠো শক্ত হয়ে উঠছে। মরে যাওয়া বক্সারটা শরীর ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে বাইরে।

‘ওয়ে, কানে কথা ঢুকছে না।’ সুদেশ জোরে বলল এবার, ‘যাও তাড়াতাড়ি। এসে ওই টেবিলে রাখা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা নিয়ে নেবে, কেমন? অব যাও।’

অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার? মহীর যেন হুঁশ ফিরল। পাশের টেবিলে রাখা আছে একটা খাম। ওর জীবন-দায়ী চিঠি!

ও তাকাল সুদেশের দিকে। হাতের মুঠো আলগা হয়ে এল আপনা থেকে। মাথা নিচু করে মহী বেরিয়ে এল ঘর থেকে।

পম বলল, ‘দরজাটা টেনে দিয়ে যাও। আর জিনিসটা নিয়ে এসে নক করবে, বুঝেছ?’

দরজাটা টেনে বন্ধ করে দিতে দিতে এক চিলতে ফাঁকদিয়ে পমকে দেখল মহী। দেখল একটা গরমকালের দুপুর। আর ফাইভার গ্লাসের শেড দেওয়া ছাদে একটা দোলনা দুলছে। ফাঁকা একটা দোলনা দুলছে।

সিঁড়ির মুখে এসে থমকে দাঁড়াল মহী। বুঝল, গল্পটা আসলে লড়াই-এর ছিল বরাবর, কিন্তু এখন বদলে গেছে আপোশে। আর বুঝল জীবনে এমন সিঁড়িও থাকে যা মানুষকে একটা গল্প থেকে অনায়াসে নামিয়ে নিয়ে যায় অন্য আর একটা গল্পে।

No comments