মোটা ও পাতলা – আন্তন চেখভ

মোটা ও পাতলা – আন্তন চেখভ

দুই বন্ধু — একজন মোটা মানুষ ও অন্যজন পাতলা মানুষের দেখা হয়েছিল নিকোলাভস্কি স্টেশনে। মোটা লোকটি স্টেশনে সবেমাত্র খাবার খেয়েছিল। তার ঠোঁট পাকা চেরির মতো জ্বলজ্বল করছিল। পাতলা লোকটি সবেমাত্র ট্রেন থেকে নামল। তার সাথে ছিল বাক্সপেটরা। আর হালকা পাতলা লম্বা চিবুকের তার স্ত্রী, ও এক চোখ বাঁকা লম্বাটে স্কুলছাত্র।

পাতলা লোকটিকে দেখে মোটা লোকটি কেঁদে উঠল। “এ কি তুমি? আমার প্রিয় বন্ধু! কত গ্রীষ্ম, কত শীত!”

চিৎকার করে উঠে পাতলা লোকটি বলল, “ওহ, আমার ছোটবেলার বন্ধু! কোথা থেকে এলে?”

বন্ধুরা একে অপরকে তিনবার চুম্বন করল। চোখের জলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকল।

“আমার প্রিয় বন্ধু!” চুম্বন করার পরে পাতলা মানুষটি বলতে শুরু করল, “আমাদের দেখা হওয়া অপ্রত্যাশিত! এটা একটা সারপ্রাইজ! আমার দিকে ভালো করে তাকাও! আমি আগের মতোই সুদর্শন আছি!” মোটা লোকটি বলল, “করুণাময় আমাকে ভালই রেখেছে, তুমি কেমন আছো? তুমি কি বিবাহিত?”

“আমি বিবাহিত তুমি দেখছো… এই হচ্ছে আমার স্ত্রী লুইস, তার প্রথম নাম ছিল ভ্যানসেনবাখ। এটি আমার ছেলে নাফানাইল, তৃতীয় শ্রেণির একজন স্কুলছাত্র। আমার ছোটবেলার বন্ধু, নাফানিয়া। আমরা একসাথে স্কুলে ছিলাম!” সে শেষের কথাটা তার স্ত্রী ও ছেলেকে বলল।

নাফানিয়া একটু ভেবে টুপি খুলে ফেলল।

পাতলা লোকটি এগিয়ে গিয়ে বলল। “তোমার কি মনে আছে কিভাবে তারা তোমাকে জ্বালাতন করত? তোমার ডাকনাম ছিল হেরোস্ট্রাটাস কারণ তুমি একটা সিগারেট দিয়ে বই পুড়িয়েছিলে, আর আমার ডাকনাম ছিল ইফোইয়ালটিস কারণ আমি গল্প বলতে পছন্দ করতাম। লজ্জা পেয়ো না, বন্ধু, তার আরও কাছে যাও। এই আমার স্ত্রী, তার প্রথম নাম ছিল ভ্যানসেনবাখ, লুথরান হিসাবে।”

নাফনাইল একটু ভেবে বাবার পিঠে কাছে এলো।

“আচ্ছা, বন্ধু তুমি কেমন আছো?” মোটা লোকটি তার বন্ধুর দিকে উৎসাহের সাথে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি চাকরিতে আছো? তুমি কোন গ্রেডে পৌঁছেছো?”

“আমি, প্রিয় বন্ধু! আমি গত দুই বছর ধরে কলেজিয়েট অ্যাসেসর ছিলাম। বেতন খুব কম, কিন্তু এটা কোন বড় ব্যাপার নয়! স্ত্রী গান শেখায়, এবং আমি কাঠের সিগারেটের কেস খোদাই করতে যাই একটি ব্যক্তিগত ভাবে। ক্যাপিটাল সিগারেট কেস! আমি প্রতিটি এক রুবেলের বিনিময়ে সেগুলি বিক্রি করি। যদি কেউ দশ বা তার বেশি নেয় তবে আমি অবশ্যই কমিয়ে দিই।

আমরা কোনো না কোনোভাবে মিশে যাই। আমি একজন কেরানি হিসেবে কাজ করেছি, তুমি জান, এখন আমি এখানে একই ডিপার্টমেন্টের হেড ক্লার্ক হিসেবে বদলি হয়েছি। আমি এখানে চাকরি করতে যাচ্ছি। আর তোমার কী হবে? আমি বাজি ধরে বলতে পারি তুমি এখন সিভিল কাউন্সিলর?”

“না প্রিয় বন্ধু, তার চেয়েও উপরে।” মোটা লোকটি বলল। “আমি ইতিমধ্যেই প্রাইভি কাউন্সিলর হয়েছি… আমি দুটি স্টার পেয়েছি ”

পাতলা লোকটি মোটা বন্ধুর কথা শুনে ফ্যাকাশে ও লজ্জিত ভাব দেখাল। কিন্তু শীঘ্রই তার মুখটি বিস্তৃত হাসিতে সমস্ত দিকে ছড়িয়ে পড়ল ; মনে হচ্ছিল যেন তার মুখ ও চোখ থেকে স্ফুলিঙ্গ ঝলকাচ্ছে। … তার স্ত্রীর দীর্ঘ চিবুক এখনও দীর্ঘতর হয়েছে। তাদের ছেলে নাফানাইলের মনোযোগ আকর্ষণ জন্য তার ইউনিফর্মের সমস্ত বোতাম লাগিয়ে দিল।

মহামান্য, আমি। … আনন্দিত! বন্ধু, কেউ বলতে পারে, শৈশবের সেই ছেলেটি এত বড় মানুষে পরিণত হয়েছে!”

“বাদ দাও ও কথা!” মোটা লোকটি ভ্রুকুটি করে বলল। “এই টোনটা কিসের জন্য? তুমি আর আমি ছেলেবেলায় বন্ধু ছিলাম। আমারকে এখন একথা বলার কোন দরকার নেই!”

“করুণাময় ঈশ্বর, মহামহিম! তুমি কি বলছ … ?” পাতলা লোকটিকে বিরক্ত হয়ে বলল।

“ওহ, মহামান্য, আমার ছেলে নাফানাইল, … আমার স্ত্রী লুইস, একটি নির্দিষ্ট অর্থে একজন লুথারান।”

মোটা লোকটির কথার প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল, কিন্তু পাতলা লোকটির মুখে এমন শ্রদ্ধা, মিষ্টিতা ও শ্রদ্ধার প্রকাশ দেখে সে দুঃখ পেল। সে পাতলা লোকটির কাছ থেকে দূরে সরে যাবার আগে বিদায়ের সময় সে পাতলা মানুষটি সাথে হাত মেলাল।

পাতলা লোকটি তিনটি আঙুল চেপে, তার সমস্ত শরীরকে নত করে চিনাম্যানের মতো বলল: “সে-সে-সে!” তার স্ত্রী হাসলেন। নাফানাইল পা দিয়ে ঠেলা মেরে টুপি ফেলে দিল। তিনজনই অভিভূত।

অনুবাদ : মনোজিৎকুমার দাস

No comments